চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারিত ট্যারিফ ব্যবস্থা স্থগিত করার জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। শনিবার রাতে রেডিসন ব্লু বু ভিউতে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী সমন্বয় সভায় বক্তারা এই দাবি তুলেছেন। তারা বলেছেন, অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া ট্যারিফের বিরুদ্ধে সাধারণ ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়, তাই এই ট্যারিফ বন্ধ করার উচিত।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। এ আয়োজন চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এসএম আবু তৈয়বের পরিচালনায় সমঝোতা ও মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এমএ সালাম।
বক্তারা বলেন, বন্দরের ট্যারিফের এই অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তারা অভিযোগ করেন, মূলত হয়রানিমূলক এই মূল্য বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও প্রতিকার পাননি। আবেগের সঙ্গে একটি নেতা বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছি, কখনোই বন্দরের এই লস দেখিনি। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ব্যবসা প্রসার স্থবির হবে। তিনি আরও বলেন, বন্দরে নতুন করে কোন ঝামেলা যেন না আসে, আমরাও চাই একজন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বন্দরের পরিচালনা বোর্ডে থাকুক।
অন্য এক বক্তা বলেন, বন্দরের এই চরম ট্যারিফ বৃদ্ধির পিছনে ষড়যন্ত্র লুকানো রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, পেঁয়াজ ও কলার মতো পণ্য ছাড়া বাড়ানো হয়নি, তাহলে অন্য পণ্য কেন বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৪০ বছর ব্যবসা করছি, এই ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে জানি।’ তিনি দাবি করেন, বন্দরের এই অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি পৌঁছানোর জন্য ব্যবসায়ীদের না বলেই একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছিল।
বিজিএমইএর একজন প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা অনেক দেশের তুলনায় বেশি খরচে ব্যবসা করছে। ভারত, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খরচ বেশি হওয়ায় হার মানতে হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, পক্ষে এই ট্যারিফ কেন এত বেশি বাড়ানো হচ্ছে?
মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী বলেন, এই ট্যারিফের বাড়ানো দেশের জনগণের জন্য ক্ষতিকর। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরটি দেশের উন্নয়নে অনেক গর্বের বিষয় হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি জনগণের ক্ষতিসাধন করছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বন্দরের এই অর্থনীতি কীভাবে দেশের নানা খাতে ক্ষতি করছে, তা প্রতিটি ব্যবসায়ী বুঝতে পারছেন। তিনি দাবি করেন, এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবশিপগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং চিটাগং চেম্বারসহ সকল শিপিং এজেন্টদের সমানভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
সভা শেষে বক্তারা বলেন, বন্দরের এই অপ্রত্যাশিত ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে দেশের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা তাদের খরচ বাড়ছে, ফলে দেশের রপ্তানি ও ব্যবসার অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের দাবি—এই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাতিল করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা করতে হবে।