ঢাকা | মঙ্গলবার | ১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশে হালাল শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে: বিশেষজ্ঞরা

বাংলাদেশের হালাল শিল্পের বিস্তারকে বিশ্ব বাজারে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার জন্য প্রয়োজন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা এবং বর্তমান সুযোগগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। এই আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা সাধারণত বলেন, হালাল বাজারের অগণিত সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হলে একটি ঐক্যবদ্ধ, জ্ঞানভিত্তিক এবং বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থ পশ্চাদপোষিত হালাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা এখন সবচেয়ে জরুরি সময়।

তারা আরও উল্লেখ করেন যে, কোনো পণ্য শুধু ধর্মীয়ভাবে বৈধ হলেই যথেষ্ট নয়, বরং সেই পণ্য বিশুদ্ধ, নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মতও হতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) হালাল সার্টিফিকেশন উদ্যোগ বাংলাদেশের হালাল শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা গেছে।

শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের হালাল শিল্পের উন্নয়ন: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বার এর সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী বলেন, হালাল শিল্প এখন শুধু একটি ধর্মীয় আচার বা বিধান নয়, এটি আন্তর্জাতিক অর্থনীতির দ্রুতবর্ধনশীল ও সম্ভাবনাময় এক খাত।

তিনি জানান, বিশ্বে হালাল পণ্যের বাজার আনুমানিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনও মাত্র ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের হালাল পণ্য রপ্তানি করছে। অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক। কার্যকর হালাল ইকোসিস্টেম ও আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেশন বোর্ডের অভাবে দেশের এই সম্ভাবনাময় খাতের যথাযথ বিকাশ হচ্ছে না।

রাজিব এইচ চৌধুরী আরও জানান, ২০৩৪ সালের মধ্যে বিশ্ববাজারের হালাল পণ্যের আকার প্রায় ৯ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। কিন্তু কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অপার দুর্বলতা, আন্তর্জাতিক মানের না থাকা, জটিল সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া, আধুনিক ল্যাবের অভাব এবং দক্ষ জনবল সংকটের কারণে এই খাতের অগ্রগতি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, এই খাতের উন্নয়নের জন্য এখনই স্বতন্ত্র হালাল সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠনের প্রয়োজন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ‘আইইউবিএটির’ মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মমিনুল ইসলাম বলেন, ২ আগস্ট ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের স্টেকহোল্ডার সংলাপ ও আগস্টের শেষ দিকে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত যৌথ কর্মসূচি বাংলাদেশের হালাল শিল্পের হাব গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পথে আরও এগিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে দেশে ৩০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান হালাল সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন একটি কার্যকর, সমন্বিত জাতীয় হালাল কর্তৃপক্ষ গঠনের, যেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বিএসটিআই, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্পখাতের মধ্যে সমন্বয় থাকবে। তাছাড়া, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে হালাল শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি অপরিহার্য।

তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো ধর্মীয় বিধান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও জাতীয় ব্র্যান্ডিংকে একত্রিত করে হালাল খাতকে উন্নত করেছে। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশগুলো এগোলে বাংলাদেশও বিশাল সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারবে। তবে, দেশের এখনও ‘হালাল কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং’ গড়ে ওঠেনি। এজন্য বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক হালাল এক্সপো আয়োজনের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন বক্তারা।

অন্তিমত, বক্তারা আশাবাদ প্রকাশ করেন যে, যৌথ উদ্যোগ, নৈতিক দায়িত্ববোধ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ একদিন বৈশ্বিক হালাল বাজারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে নিজস্ব স্থান করে নেবে। এর ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি জাতির সম্মান ও আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। সভায় যোগ দেন নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, যেমন বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. জহিরুল ইসলাম, বিডার মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক, বিএসটিআইর উপপরিচালক এস এম আবু সাইদ, ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ড. মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী প্রমুখ। যোগদান করেন ডিসিসিআই এর সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান ও অন্যান্য সদস্যরা।