ঢাকা | শুক্রবার | ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

চীনে বসে হুমকি দেন পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যদি ইউক্রেন চুক্তিতে রাজি না হয়, তবে রাশিয়া তার সকল লক্ষ্য অর্জনের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাবার প্রস্তুত। এই মন্তব্য করেন তিনি চীনে গত বুধবার একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার পর। তাঁর এই বক্তব্যকে বিশ্বজনপ্রিয় বিশ্লেষকরা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিশ্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই যুদ্ধের শেষ আনতে পুতিনকে আলোচনা করতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এই রুশ নেতা ট্রাম্পের আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেও এখনো তিনি আলোচনা বা আলোচনা টেবিলে বসতে রাজি নন। যুক্তরাজ্যের ডিফেন্স সেক্রেটারি জন হিলি কিয়েভ সফরে এসে বিবিসিকে বলেছেন, ট্রাম্প পুতিনকে আলোচনা টেবিলে আনার জন্য চাপ দিচ্ছেন এবং আরও চাপ দেওয়ার কোন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশরা পুতিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি ইউক্রেনকে যুদ্ধের জন্য টেকো রাখতে অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুত। গত মাসে আলাস্কায় ট্রাম্পের সাথে পুতিনের বৈঠক হয়, যেখানে তিনি পুতিনকে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বের করে আনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। এছাড়া, ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। বুধবার পুতিন বলেন, আমি কখনোই এমন বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিইনি, তবে এর কোনও অর্থ বা ফলাফল পেতে হলে প্রস্তুতি দরকার। জেনে রাখা প্রয়োজন, জেলেনস্কির মস্কো যাওয়ার পরিকল্পনাও রাশিয়ার অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে ইউক্রেন। তবে, এই বৈঠক না হওয়ার সিদ্ধান্তকে রাশিয়ার ওপরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক উপায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশের উপর পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করে। অন্যদিকে, ট্রাম্প বলেছেন, আমি জানি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে কি বলবেন। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমার কোনও বার্তা নেই পুতিনের জন্য, তিনি আমার অবস্থান জানেন এবং তিনি নিজের সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশটির কাছে থাকা রাশিয়ার তেল কিনতে ভারতে শুল্ক আরোপের বিষয়ে সাংবাদিক একটি প্রশ্ন করলে ট্রাম্প তাতে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেননি বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমি এখনও দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ের পদক্ষেপ নেইনি। বেইজিংয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক প্রতিবেদক পুতিনের কাছে জানতে চান, ইউক্রেনের পরিস্থিতি কি শীঘ্রই সমাধান 될 সম্ভাবনা রয়েছে কি না। পুতিন জবাব দেন, পথের শেষে নিশ্চয়ই কোনও আলো আছে। আমি মনে করি, সাধারণ বুদ্ধি থাকলে এই সংঘাতের অবসানে গ্রহণযোগ্য সমাধান আসতে পারে। যদি না হয়, তবে আমাদের সব কাজ সামরিকভাবেই শেষ করতে হবে। তবে জোর দিয়ে তিনি জানান, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চল রাশিয়া ছাড়বে না। পুতিন আরও দাবি করেন, ইউক্রেন যেন ন্যাটোর সদস্যপদ না নেয় এবং জাতিগত রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে চালানো বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করে। এই অভিযোগগুলো রাশিয়ার আগ্রাসনের অন্যতম অজুহাত হিসেবে দেখা হয়। তিনি ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে শান্তি চুক্তির পরে পশ্চিমা দেশগুলো ডনবাসে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়গুলো আর প্রযোজ্য হবে না, যেখানে বাসিন্দারা রাশিয়ায় যোগদানের জন্য ভোট দিয়েছিলেন। এই ভোট ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বেইজিংয়ে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। কিম জানিয়ে দেন, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার পাশে থাকবে ‘ভ্রাতৃপ্রতিম দায়িত্ব’ থেকে। রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক একদম বিশ্বাসযোগ্য, বন্ধুত্বপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ। এরইমধ্যে, বৃহস্পতিতেও ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ইউক্রেনের সমর্থকদের জন্য একটি জোট বা কোয়ালিশন গঠনের উদ্যোগ নেবেন। এটির লক্ষ্য হলো, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাশিয়ার তরফ থেকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ সৃষ্টি করা। গত মাসে আলাস্কায় ট্রাম্প পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে চাপ দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার পর থেকে তিনি জানান, সংঘাতের অবসান জন্য শান্তি চুক্তির পথ খোঁজা হবে। তবে পুতিন এর বিরোধিতা করে আরও বেশ কিছু দিন ইউরোপীয় শহরগুলোর ওপর হামলা চালায়, যেখানে শুধুমাত্র বুধবার রাতেই রাশিয়া পাঁচশ ড্রোন ও ২৪টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে धमকি দেয়।