সরকার নতুন একটি সংস্কার প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে, যা জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আরো আধুনিক ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় প্রত্যেক প্রার্থী ভোটে সর্বোচ্চ ১০ টাকা করে ব্যয় করতে পারবেন, যা নির্বাচনী ব্যয়ের একটি নতুন মাত্রা সৃষ্টির আশা জাগিয়েছে। আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিতর্কিত এই প্রস্তাবের বিস্তারিত তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যাপক গণবিবেচনায় কমিশন বেশ কিছু আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন বিধান যুক্ত করা, যেখানে নির্বাচনী ব্যয় সীমাকে সর্বনিম্ন ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ফি গ্রহণের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে, আগে যেখানে ২০ হাজার টাকা ছিল, এখন থেকে তা ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করছে নির্বাচন কমিশন, যা এখন উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ। এরপর আইন মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবের ভেটিং করে দেশজুড়ে কার্যকর করবে। এর অংশ হিসেবে, নতুন বিধান আনা হয়েছে — যেখানে দেশের যে কোনো ফৌজদারি মামলায় ফেরারি আসামি হলে তার জন্য অযোগ্যতা জারি করা হবে। এর মাধ্যমে নির্বাচনে অপব্যবহার এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ইসি নেতারা।
এছাড়াও, এবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের জন্য জামানত বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ২০ হাজার টাকা জামানত থাকলেও অাগামী নির্বাচন থেকে তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে। যদিও অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমাদানের বিধান এ পর্যন্ত রাখা হয়নি।
নির্বাচন খরচের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। বিদ্যমান আইনে প্রার্থীরা ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারতেন, যা এখন থেকে বাতিল হয়ে, প্রার্থীরা আসনের ভোটারসংখ্যার ভিত্তিতে টাকা ব্যয় করতে পারবেন। এর জন্য ভোটারপ্রতি ১০ টাকা ব্যয় করার সুযোগ রাখা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গাজীপুর-২ আসনে সর্বোচ্চ ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৬ জন, যার জন্য প্রার্থীরা প্রায় ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। একইভাবে, ঢাকা-১৯ আসনে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করার সুযোগ থাকছে।
নির্বাচনী পর্যবেক্ষণে জানানো হয়, যদি কোন প্রার্থী বা দল কোনও ধরনের অনিয়ম করে, তাহলে রিটার্নিং অফিসার পূর্বানুমতি ছাড়া নির্বাচনের রদ বা বাতিল ঘোষণা করতে পারেন। এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া হবে আরও স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং আধুনিক।