বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন যে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মাঠ থেকে পলায়ন ও তাদের অপসারণের পর, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে দেশি-বিদেশি মহল নতুন একটি পরিকল্পনা চালু করেছে। এই পরিকল্পনাকে তিনি ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা দেশের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।
আব্বাস এক সাক্ষাৎকারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, খাগড়াছড়ির সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে কেন্দ্র করে কিছু অপশক্তি দেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, এই অপরাধীদের উদ্দেশ্য হলো দেশকে অস্থিতিশীল করে এনে রাজনৈতিক শাসন নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল বিভিন্ন অজুহাতে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করে দিতে চায়, যাতে দেশ আরও অস্থিতিশীল হয়। বিএনপি নেতা সতর্ক করে বলেন, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে দেশের জন্য বড় ক্ষতি হবে।
আব্বাস মনে করেন, বাংলাদেশে এখন নতুন এক ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ চালু হয়েছে, যা ২০০6-2007 সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের ‘মাইনাস-টু’ পরিকল্পনার মতোই। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ভিন্নভাবে এই ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তিনি অভিযোগ করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিএনপিকে অবিশ্বস্ত হিসেবে উপস্থাপন করার পরিকল্পনা চলছে।
আব্বাসের মতে, আওয়ামী লীগকেও আওয়ামীপন্থি কিছু প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী দুর্বল করে দেশের ব্যবস্থা নিজেদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি বলেন, দেশের শীর্ষ নেতারা দেশের বাইরে থাকাকালীন বিএনপিকে সরিয়ে দিতে মরিয়া।
তিনি আরও বলেছেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল রাখতে চান, তারাই এই ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়নের পেছনে আছে। এটি একটি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, যা অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার অপচেষ্টা। একই সঙ্গে, কিছু আওয়ামী লীগ সমর্থক আমলারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তারা মনে করছে, বিএনপিকে দমন করলে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধ হবে।
অবশ্য, বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষ বিএনপিকে ভালোবাসে এবং কোনো অপপ্রচারণা তার জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ করতে পারবে না। তিনি যোগ করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসনের দুর্বলতাগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে, যাতে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়।
আব্বাস জানিয়ে দেন, নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরো সংগঠনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার আশা করছে। নির্বাচনপ্রণোদিত নানা রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গেও তিনি জানান, নির্বাচন ঠেকানোর জন্য কিছু দল চেষ্টা করছে, যা ব্যর্থ হলে দেশের জন্য ক্ষতি হবে।
বিশ্লেষণে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে বলে বিশ্বাস রাখা উচিত। তবে, খালেদা জিয়া নির্বাচনে যোগ দেবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত তার শারীরিক অবস্থা ও ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।
আব্বাস আরও বলেন, দেশের উন্নয়নে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে বৈধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়। পাশাপাশি, ইসলামি দলগুলোর জোট গঠন নিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, বিএনপি এর জন্য চিন্তিত নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ধর্মনিরপেক্ষ ও মধ্যপন্থি ইসলামকে সমর্থন করে, যারা ধর্মীয় বিভাজনে না গিয়ে গণতান্ত্রিক পথে থাকতে চায়।