ঢাকা | সোমবার | ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নির্ধারিত দামে এলপিজি মিলছে না উপভোক্তাদের কাছে

বেসরকারি খাতের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এর দাম প্রতি মাসে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দ্বারা সমন্বয় করা হলেও ভোক্তাদের কাছে আদৌ সেই নির্ধারিত দামে এলপিজি পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোক্তাদের ভাষ্য, তারা ১২ কেজির সিলিন্ডার কিনতে গিয়েও অতিরিক্ত ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগরে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে এই গ্যাসের সিলিন্ডার।

গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ডিসেম্বর মাসের জন্য নতুন দাম ঘোষণা করে বিইআরসি, এতে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৩ টাকা। এর আগে নভেম্বর মাসে দাম ছিল ১ হাজার ২১৫ টাকা। এভাবে প্রতি মাসে নতুন করে দাম নির্ধারণ করে আসছে সংস্থাটি।

এলপিজির প্রধান ব্যবহৃত [সরেজমিনে দেখা যায় যে, বিভিন্ন এলাকার বিক্রেতারা দামে ভিন্নতা দেখিয়ে থাকেন, যা ভোক্তাদের জন্য বেশ ঝামেলার], কারণ ঢাকা থেকে ভোলার বোরহানউদ্দিনের বাসিন্দা কেয়া হোসেন বলেন, প্রতিমাসে ওই বিক্রেতাদের কাছ থেকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা অতিরিক্ত গুণতে হয়। নভেম্বরে তার কেনাকাটা ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা, তবে বাড়তি খরচে পৌঁছাতে আরও ৫০ টাকা যোগ করতে হয়েছে।

বিইআরসি এর আইনি দায়িত্ব অনিয়মিতভাবে পালন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। আইন অনুযায়ী যে ক্ষমতাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো প্রয়োগে তারা অনীহা দেখাচ্ছে। ফলে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সে সব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন হচ্ছ configs না।

ঢাকার কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ জানান, তিনি নভেম্বরে ১২ কেজির এলপিজি কিনেছেন ১ হাজার ৪৫০ টাকায়, তবে তারও বাসায় পৌঁছে দিতে আরও ৫০ টাকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দাম বৃদ্ধির কারণে তিনি আশঙ্কা করছেন যে, নতুন দামে কিনতে গেলে কিছুটা আরও বেশি খরচ হতে পারে।

অন্যদিকে, মোহাম্মদপুরের কামরুন্নেছা রুহী বলেন, গত মাসে তিনি ১২ কেজির এলপিজি কিনেছিলেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়, যেখানে ফয়সালকে তার চেয়ে প্রায় সাড়ে শ’ টাকা কমতে হয়েছে।

২০২১ সালের এপ্রিলে এলপিজির দাম নির্ধারণের পর থেকে বিইআরসি এই দায়িত্ব পালন করছে। তবে দুই বছর ধরে পরিবেশক ও কোম্পানির মধ্যে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিরোধ চলছিল, এবং তখন কোম্পানিগুলো তাদের সরবরাহে নিরবচ্ছিন্নতার অভাবে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে আসছিলো। সম্প্রতি কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর জন্য নির্ধারিত দামে সরবরাহের বাধা কমে এসেছে।

সারাদেশে এলপিজির বিতরণ ও বিক্রির জন্য পরিবেশক সমিতির সভাপতি সেলিম খান বলেন, পরিবেশক পর্যায়ে দাম ঠিকই রয়েছে, অতিরিক্ত দামে বিক্রির সুযোগ নেই। তবে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে বিক্রি করছেন, যা বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান প্রয়োজন।

বিইআরসির ভাষ্যমতে, বাজারে নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি নিশ্চিত করতে সংস্থার বাজার নজরদারির সক্ষমতা ভালো নয়। তারা বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে নজরদারির অনুরোধ জানায় এবং ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। তবে লাইসেন্স না থাকায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গত জানুয়ারি মাসের মধ্যে সব পরিবেশককে লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এরপর খুচরা বিক্রেতাদের আওতায় আনা হবে।

নতুন দর অনুযায়ী, প্রতি কেজি ১০৪ টাকা ৪১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত মাসে ছিল ১০১ টাকা ২৪ পয়সা। অর্থাৎ কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৩ টাকা ১৭ পয়সা। অন্যদিকে, সরকারী সংস্থাগুলোর সরবরাহে ১২.৫ কেজি সিলিন্ডার ডিলারপ্রতি ৮২৫ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে, তবে অধিকাংশ ভোক্তা তা সংগ্রহ করতে পারেন না। বাজারের চাহিদার বেশি ভাগই সরবরাহ হয় বেসরকারি খাতে।

এতদ্বারা ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, বিইআরসি তাদের আইনি দায়িত্ব পালন করছে না, প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রয়োগ হয় না। এই পরিস্থিতিতে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে বর্তমান কমিশনের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।