ঢাকা | রবিবার | ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

দেশের পোশাক শিল্পের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন শুল্ক চাপ এবং ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার কারণে চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতির কারণে বিদেশি ক্রেতারা কম দাম দিয়ে অর্ডার দিচ্ছেন, যার ফলে দেশের রপ্তানি লক্ষ্য অর্জনে অশুভ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছর ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, বিশেষ করে জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক ও সুইডেনসহ ১২টি দেশের বাজারে কিছু কিছু দেশে রপ্তানি কমেছে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে দেশের ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অপরদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে দরকষাকষির ফলে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের শুল্ক হার ২০ শতাংশে নামলে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করা হলেও, মার্কিন অর্থনীতির মন্দার কারণে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। অধিকাংশ আমদানিকারক ও ক্রেতা বাড়তি শুল্কের বোঝা না বোঝায় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্ডার কমতে থাকে। বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নির্বাচনের প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই ক্রেতাদের মনোভাবকে প্রভাবিত করেছে।

চট্টগ্রামের ক্লিফটন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘‘আমরা মনে করেছিলাম, বাংলাদেশ চাহিদার দিক থেকে ভারতের ও চীনের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু চাহিদা কম থাকায় আমাদের অর্ডার বেশ কিছুটা কমে গেছে। এ সময়ে আমাদের জন্য খুবই কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’’

বিজিএমইএর পরিচালক সাইফুল্লাহ মনসুর জানান, ‘‘রিটেইলাররা বলছেন, আমি এসব অর্ডার ক্রেতাদের ওপর ইমপ্যাক্ট করতে পারব না। ২০ শতাংশ শুল্কে পরিবর্তন নিয়ে বেশ উদ্বেগে আছেন। পাশাপাশি, চলমান রাজনীতি ও অস্থিরতার কারণে অর্ডার কমে গেছে।’’

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রায় ৪৮ শতাংশ রপ্তানি হয় ইউরোপে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার হলো জার্মানি। তবে, ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক এবং সুইডেনেও রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যেখানে কিছু কিছু দেশে বাজারে ৭৫ শতাংশের বেশি হার কমেছে। মার্কিন শুল্কের চাপ কমানোর ফলে প্রতিযোগীতার চাপ বেড়ে গেছে, এবং বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা বাংলাদেশের তুলনায় অন্য দেশের পণ্য বেশি কিনতে উৎসাহী। ফলে, দেশের রপ্তানিকারকদের জন্য মূল্য কম থাকলেও বিভিন্ন খাতে খরচ বাড়ায় আয় ব্যাহত হচ্ছে।

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি রফিক চৌধুরী বলেন, ‘‘আগে যেসব কোম্পানি ইউরোপে কাজ করত, এখন তাদের সাথে আমাদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। অর্ডার পাড়ার লড়াইয়ে কে কম দামে অর্ডার নেবে, এই বিষয়টি আমাদের জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে।’’

আরেক সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘‘যখন ভারতীয় মার্কেট ইউরোপে এতো বেশি যাচ্ছে, তখন আমাদের জন্য সমস্যা হচ্ছে। আমাদের কোনো শুল্ক কমেনি, আর লোকাল দামও বেড়ে গেছে, ফলে উৎপাদনমূল্যের দিক থেকে আমরা অন্যান্য দেশের সঙ্গে থাকতে পারছি না।’’

অর্ডার কম থাকায় অনেক কারখানা আর্থিক কষ্টে পড়ে গেছে এবং শ্রমিকদের বেতন দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংক থেকে সাহায্য পাওয়ার বিষয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। উদ্যোক্তারা সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়তা ও স্বল্প সুদে ঋণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তবে, ব্যাংকের সহায়তা এখনও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বিজিএমইএর দাবি, বিশ্ব পরিস্থিতির তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি sector এর জন্য আরও বেশি সহায়তা ও সুবিধা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২৫–২৬ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ৪৫ বিলিয়ন ডলার আঘাত করা। ইতোমধ্যে, প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের এই শিল্পের ভবিষ্যৎ অটুট রাখতে সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য, বলেছেন শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষজন।