ঢাকা | শনিবার | ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শ্রীমঙ্গলে ট্রেনের টিকিট সংকটে পর্যটকদের ভোগান্তি

দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এবং চায়ের রাজধানী হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পর্যটক ও স্থানীয় মানুষজনের জন্য ট্রেনের টিকিট পাওয়া দিনদিন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় ট্রেনের সিটের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল হওয়ায়, সপ্তাহের ১০ দিন আগেই সার্বিক টিকিটের ব্যাপক বুকিং হয়ে যায়। এর ফলে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা যেমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি এখানকার স্থানীয় সাধারণ যাত্রীরা ওজনক ভোগান্তিতে পড়ছেন।

গত শুক্রবার ঢাকা থেকে পরিবারের সবাই নিয়ে শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে এসেছিলেন পর্যটক আরোফিন আহমেদ। বাসে করে যাত্রা করাটা তার জন্য খুবই অস্বস্তিকর ছিল। ট্রেনে ফিরতে চাইলেও রোববার বা সোমবারের জন্য কোনো টিকিট পাননি। শেষে বাধ্য হয়েই বাসে করে ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছে তাঁকে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক হুমায়রা সুলতানা বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পরেও ট্রেনের টিকিট পাইনি। ছোট শিশুসহ দীর্ঘ সময়ের জন্য ট্রেনে বসে থাকতে হয়, যা খুবই কষ্টদায়ক। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি, কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনটি ১৯১২ সালে চালু হয়, এবং এটি মৌলভীবাজার জেলার তিনটি উপজেলার প্রধান যাত্রাপথ। এছাড়া, এই শহরটি দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী হওয়ায় স্টেশনের গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসে, তবে টিকিটের সংকট তাদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের সূত্রে জানা যায়, ঢাকাগামী ট্রেনের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা হলো, কালনী এক্সপ্রেসে ৮১টি, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে ৭০টি, পারাবত এক্সপ্রেসে ১০৫টি, উপবন এক্সপ্রেসে ৬৫টি, পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে ৪৭টি ও উদয়ন এক্সপ্রেসে ৩০টি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী লিটন অধিকারী বলেন, ‘প্রতিশপ্ত সপ্তাহেই ঢাকায় যেতে হয়। স্টেশনে অপ্রতুল টিকিটের জন্য সিলেট থেকে ঢাকায় বেশি ভাড়া দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।’

রাধানগর পর্যটন কল্যাণ পরিষদের যুগ্ম সভাপতি তাপস দাশ উল্লেখ করেন, ‘শ্রীমঙ্গলের প্রায় ১০০টি হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসলেও, ট্রেনের টিকিটের প্রাপ্যতা এত কম যে তা ১০ দিন আগেই বুক হয়ে যায়। এতে পুরো পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

স্থানীয়রা দাবি করছেন, পর্যটনের স্বার্থে আরও বেশি ট্রেন চালু করা এবং সিটের সংখ্যা বাড়ানোর দরকার।

পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মা বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা রিটার্নের টিকিট। বিদেশিদের জন্য কোনো কোটা নেই, ফলে তাদের জন্য নির্ধারিত ট্রেনের টিকিটও খুবই সংকটপূর্ণ। রাতে ২টার পর ঢাকাগামী ট্রেনের জন্য স্টেশনে অনেক পর্যটক অপেক্ষা করেন, কিন্তু স্টেশনের টয়লেট ও ভিআইপি রুমের অবস্থা খুবই নাজুক। নতুন ট্রেন চালু এবং সময়সূচি আপডেটের জন্য তিনি বিশেষভাবে আহ্বান জানান।’

শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশনের মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার হাজারো পর্যটক আসেন। তবে যাত্রীসংখ্যার তুলনায় টিকিটের সরবরাহ খুবই কম। অনলাইনে আগে থেকেই টিকিট কাটতে হয়, যেখানে কোন অজনপ্রিয়তা বা কালোবাজারির সুযোগ থাকে না। তবে আমাদের পক্ষ থেকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে টিকিটের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

অপর দিকে, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন জানিয়েছেন, এই উপজেলার পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এর অংশ হিসেবে, স্টেশনের সার্বিক সমস্যা সমাধান, ট্রেন ও টিকিট সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলছে।