ঢাকা | বুধবার | ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মির্জা ফখরুলের বক্তব্য: নির্বাচন বিলম্বের উদ্দেশ্য পিআর আন্দোলন নয়

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করে বলেছেন, পিআর পদ্ধতির আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নির্বাচনের সময় বিলম্ব ঘটানো। তিনি বলেন, ‘এটা দেশের জনগণ গ্রহণ করবে না।’ মির্জা ফখরুল আরও জানান, কিছু রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছে এবং তারা এতে আন্দোলন করছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আগামী নির্বাচন দেরিতে আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা ও জনগণের সমর্থন ছাড়া এই পদ্ধতিটি কেউ গ্রহণ করবে না। আমাদের দল পরিষ্কারভাবে বলেছে, জনগণই এই পদ্ধতিকে গ্রহণ করবে না।’ যান, গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির উদ্যোগে ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিরের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে মহাসচিব এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি। জনগণ এ জন্য অপেক্ষা করছে যাতে তারা একটি মুক্ত, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রাপ্য অধিকার ফিরে পায়।’ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা জানি, নির্বাচন নিশ্চিতভাবে হবে। এবং জনগণের ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে যে দল জিতবে, সেটিই নির্বাচন করবে। তবে সেই দল হবে পরীক্ষিত, যারা ইতিমধ্যে সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের জন্য কাজ করেছে, যারা মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে, অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছে।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথম বাংলাদেশে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করেছিলেন এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা ব্যক্ত করেছিলেন। তবে এখন কিছু দল এই ঐতিহ্য বিকৃত করে বিএনপিকে নেতিবাচকভাবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘যারা তরুণরা এখন জানে না, যারা বয়স্ক তাদের স্মৃতি আছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭৫ সালের নভেম্বরের সংঘবদ্ধ চক্রান্তের সময়ের ঘটনা। সে সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের মানুষ প্রতিবাদে বুকচেরা দিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, স্বনির্ভর বাংলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন।’ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে এবং বাংলাদেশের স্বনির্ভর, গৌরবোজ্জ্বল রাষ্ট্র হয়ে উঠতে তিনি আমাদের অনুপ্রাণিত করছেন।’ তিনি বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শক্তি দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে।’ সামনের কঠিন পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই প্রচারমাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, দেশের মানুষ সব সময় সত্যের পথে থাকেন এবং শান্তিপূর্ণ ধরনের সংগ্রামের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া যাতে জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে তাদের আস্থা প্রকাশ করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী একটি সঠিক সরকার নির্বাচিত হয়।’ তিনি একাত্তরের ইতিহাসের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার বরপুত্র হিসেবে যতটুকু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। ঐতিহাসিক ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ফলেই আজ আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে জীবন যাপন করছি। সেই সংগ্রামের ফলেই নতুন করে স্বপ্ন দেখার ও দেশের উন্নয়নের সংগ্রামে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।’ তিনি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সবাই একসঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা একত্রে স্বনির্ভর, গতিশীল ও গর্বিত দেশের নেতৃত্ব দিতে চাই।’ মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে, এই ১৪ মাসে এই সরকার সাধারণ মানুষের আশা পূরণে সক্ষম হয়নি। তবে, প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই, যাতে আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ দেখতে পারি।’ তিনি বললেন, ‘তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসিতে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, যেখানে তিনি দেশের সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন। ফিন্যাশনাল টাইমসেও তার একই বক্তব্য দেখা গেছে।’ মহাসচিব জানান, বেকার সমস্যা ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিএনপি কমিটি গঠন করে কাজ করছে এবং ইতিমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সঞ্চালনায় ছিলেন মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। বক্তব্য রাখেন জাগপার খন্দকার লুফুর রহমান, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, স্যার নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদিকী প্রমুখ।