পাকিস্তানে চলতি বছরটি একদিকে যেমন কষ্টের, তেমনি উদ্বেগজনকভাবে সন্ত্রাসবাদে আক্রান্তের সংখ্যাও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে অন্তত ৩৮২২ জন নিহত হয়েছেন—যা গত ১০ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবং ২০১৫ সালের পরই এই সর্বোচ্চ সংখ্যা। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা সাউথ এশিয়া টেরোরিজম পোর্টাল (এসএটিপি) তাদের নতুন প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে, যা দেশজুড়ে অনিরাপত্তার পরিস্থিতির গুরুতর চিত্র তুলে ধরছে।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, পাকিস্তানের ইতিহাসে ২০১৪ সালে সন্ত্রাসবাদে সর্বোচ্চ ৫৫১০ জন নিহত হন। ওই বছর পেশোয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে ভয়াবহ হামলায় ১৩৪ শিক্ষার্থীসহ মোট ১৫০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন, যা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ডার্ক অধ্যায়। এরপর ২০১৫ সালে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৩৬৮৫। এরপরের বছরগুলোতে কিছুটা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষণ দেখা গেলেও, ২০২২ সাল থেকে আবারও সন্ত্রাসের হামলার সংখ্যা বেড়ে চার অঙ্কে পৌঁছায়। এসএটিপির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে এই ধরনের হামলায় নিহতের হার প্রায় ৭০.৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানে তালেবান পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণের পরে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোর ঘটনাও উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ব্যাপক সক্রিয় থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। ইসলামাবাদীয় এক থিংকট্যাংক সিআরএসএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসে সংঘাতের হার ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। পাকিস্তান সরকার এই অভিযোগ করে যে, আফগান তালেবান তাদের কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় ও রসদ দিচ্ছে, যদিও আফগানিস্তান সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা ইস্যুটি আগের চেয়ে আরও কঠিন রূপ নিচ্ছে, এবং এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও ভূমিকা রাখতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।










