ঢাকা | সোমবার | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগ কমায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে

চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নসহ ৫টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৯১৫ কোটি ৯৯ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ১ হাজার ৯৫ কোটি ৯৪ লাখ, বৈদেশিক সহায়তা ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি ৫০ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একনেক সভা শেষে এনইসি কমিটি কক্ষ-১-এ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সচিব) ড. কাউসার আহমদসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, একদিকে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির। কেননা বর্তমানে অস্থিরতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সুদের হার বৃদ্ধি এবং নানা আন্দোলনের কারণে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে না। অন্যদিকে যদি সরকারি বিনিয়োগও কমে যায়, তাহলে অর্থনৈতিক মন্দা হতে পারে। এজন্য আমরা আজ (সোমবার) সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিচ্ছি যে, চলমান প্রকল্পগুলো দুর্নীতিমুক্তভাবে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে উন্নয়নে গতি ফিরে আসে। এছাড়া প্রকল্পে দুর্নীতি হলে এর দায় মন্ত্রণালয়কেও নিতে হবে। পাশাপাশি নতুন প্রকল্প নিয়ে বিশেষ সতর্কতা আছে। কেননা আমরা রাজনৈতিক প্রকল্প যাতে না পাশ করি। প্রকল্পে অপচয় বন্ধ করা হচ্ছে। নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সৃজনশীল এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসংক্রান্ত প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে এ কথা বলা যায়, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে যে বরাদ্দ আছে, সংশোধিত এডিপির সময় বেশ ভালোই কমবে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় যা লেখা হচ্ছে, এর সবই সঠিক।

তিনি আরও বলেন, শিগ্গিরই নির্বাচনি তোড়জোড় শুরু হবে। তখন মানুষের হাতে টাকা আসবে। অপচয় হলেও তো অর্থনৈতিক প্রবাহ ঠিক থাকবে। আগে তো উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি হলেও অর্থের প্রবাহ ঠিক ছিল। এখন তো সে অবস্থা নেই। আমরা দুর্নীতি বন্ধ করছি।

প্রকল্প পরিচালকরা (পিডি) পালিয়ে যাওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পের গতি কমেছে বলে ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেক প্রকল্প পরিচালক ভিসিদের মতো পদত্যাগ করেছেন। আবার অনেকে পালিয়ে গেছেন। তারা এতটাই দুর্নীতি করেছেন যে, পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যেমন- মাতারবাড়ী প্রকল্পের পিডি পালিয়ে গেছেন। যাওয়ার আগে সরকারি অনেক জিনিসপত্র বিক্রি করে গেছেন। এখন নতুন প্রকল্প পরিচালক দিতে হচ্ছে।

ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মানুষ অতিষ্ঠ, এর সমাধান কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শুধু ছাত্রই নয়, শ্রমিক, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলন করছে। বহু সংগঠন ঢাকা শহরে আন্দোলন করছে। তারা সড়কের পাশে আবার কখনো সড়ক আটকে এগুলো করছে। এর সমাধান কী করে হবে, আমি তো একা সমাধান করতে পারছি না। এর আগে শিক্ষার্থীদের আহ্বান করেছিলাম, তোমাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আমার কাছে এসে কথা বল। তারা কথা বলেছে। অনেক দাবি এরই মধ্যে থেমে গেছে। কারণ আমরা বলেছি ন্যায্য দাবি সমাধান করব। কিন্তু কিছু কিছু দাবি আছে যেগুলো ন্যায্য নয়, এগুলো আমরা কোনো অবস্থায়ই মানব না। ন্যায্য দাবি নয় অথচ রেললাইন অবরোধ করা হচ্ছে। যাত্রীদের আক্রমণ করা হচ্ছে। এগুলো করলে জনগণই তাদের বিরুদ্ধে যাবে, সেদিক থেকে আমরা সুবিধায় আছি। ইতোমধ্যে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে যাওয়া শুরু করেছে।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন ও ক্ষমতাবর্ধন’, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব ইউনিভার্সিটিস ইন বাংলাদেশ টু প্রমোট ইয়থ এন্ট্রাপ্রেনারশিপ’ এবং নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের ‘মোংলা বন্দরে আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’। এছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪), এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ইমার্জেন্সি মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট (২য় সংশোধিত) প্রকল্প। পাশাপাশি ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ২টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে একনেক।