ঢাকা | রবিবার | ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভিন্ন পেশার মানুষ পেয়েছে বকনা বাছুর, জেলে নয়

ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে বকনা বাছুর বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য দপ্তরের বিরুদ্ধে। সাধারণত এই ধরনের প্রকল্পে জেলেদের জন্য বকনা বাছুর বিতরণ করা হলেও, অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে প্রকৃত জেলেরা এগুলো পাওয়ার কথা থাকলেও অনেক বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি জেলেহীন পেশার মানুষ হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এ ঘটনাটি জানতে দীর্ঘ তদন্ত চালিয়েছে দৈনিক বাংলা। নিশ্চিত হওয়া গেছে, তালিকায় থাকা কিছু ব্যক্তির মধ্যে অনেকে প্রকৃত জেলে নয়, বরং অন্য পেশার—উদাহরণস্বরূপ, কাকড়া বিক্রেতা বা মুদি দোকানি। একটি উদাহরণ হলো নিরঞ্জন চন্দ্র দাস, যিনি প্রকৃত জেলে নন, কিন্তু তার নাম রয়েছে বরাদ্দের তালিকায়। দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিরঞ্জন চন্দ্রের মতো আরও অনেকের নাম এই তালিকায় রয়েছে। তারা মূলত রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি প্রকৃতজীবী জেলের স্বীকৃতি পায়নি, অথচ তারা জেলে চাল ও বকনা বাছুর পেয়ে থাকেন। তবে জেনে অবাক লাগার বিষয় হলো, অনেকের জেলে কার্ড থাকার পরও তারা মাছ ধরা বা জেলেখাতে অংশ নেননি। এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, প্রায় শ’খানেক অপ্রকৃত জেলের সন্ধান মিলেছে উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেকেরই জেলে থাকার কোনো বৈধ প্রমাণ নেই বা তারা অন্য পেশায় যুক্ত। আবার কেউ কেউ বিশেষ কারণে জেলে কার্ড পেয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে, জিন্নাগড় ইউনিয়নের মুদি দোকানী উমেশ তালুকদার, যিনি নিজেকে জেলে আখ্যা দিলেও প্রকৃত জেলে নন। তিনি জানান, তাঁর নামে আগে জেলে কার্ড ছিল, তবে তিনি কখনো জেলেহিত ছিলেন না। তিনি ব্যবসায়িক পেশায় থেকেই মূলত জেলে কার্ড পেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে, সরকারের জেলেদের বিকল্প উপায় হিসেবে বকনা বাছুর সরবরাহের প্রকল্পে এই ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে ১৭৪ জনের বেশি মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে। তবে, এই তালিকায় অনেক অপ্রকৃত ব্যক্তি বা পেশার মানুষ থাকায় ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি অনেক জেলে বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে জানা গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে সাগরে মাছ শিকার করে আসছেন, তবে তাদের এই সেবা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলছেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে, কিন্তু এই তালিকার বিশদ তথ্য আমার কাছে সংরক্ষিত নয়। শেষ পর্যন্ত, এই অনিয়মের বিষয়টি আরও তদন্তের প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এদিকে, এই দুর্নীতির বিষয়টি জনসমক্ষে আসার পর স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর কঠোর এড়া-প্রশ্বাস দিয়ে বলছেন, যথাসাধ্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, কি ধরনের নিয়ম লঙ্ঘন বা দুর্নীতির মাধ্যমে এই সব অপ্রকৃত ব্যক্তি এই সুবিধাটি পেয়েছেন, তা তদন্তের মধ্য দিয়ে জানা যাবে।