ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ইসরায়েলের পার্লামেন্টে পশ্চিম তীর দখলের বিল পাস

ফিলিস্তিনের অধিকृत পশ্চিম তীরকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এক বিতর্কিত বিল ইসরায়েলের পার্লামেন্টে প্রথম ধাপে পাস হয়েছে। এই বিলটি পূর্ণাঙ্গভাবে আইনে পরিণত হলে, পশ্চিম তীরের এই ভূখণ্ডটি ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং সেখানে ইসরায়েলের সার্বভৌম অধিকার কার্যকর হবে। তবে, এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিজেই। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আল জাজিরা সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেসেট নামে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এই বিলের প্রথম অনুমোদন দিয়েছে। এই বিলটি কার্যকর হলে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য এক বড় ধরনের প্রত্যাখ্যান। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ১২০টি আসনের নেসেটে এই বিলটি ২৫ ভোটে পাস হয়। এখনও এই বিলটি আইন হিসেবে রূপ নিতে আরও তিন ধাপের ভোট প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর দল লিকুদ পার্টি এই বিলের বিরোধিতা করলেও, বেশ কিছু জোটসঙ্গী ও বিরোধী এমপির সমর্থন পায় এটিতে।

নেসেটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই বিলের মাধ্যমে জুদিয়া ও সামারিয়া এলাকাগুলোতে (পশ্চিম তীর) ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা হবে।” এরপর এই বিলটি আরো আলোচনা ও অনুমোদনের জন্য সংসদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে পাঠানো হবে। ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তের সময়ের সঙ্গে সামনে আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বছর আগে দেওয়া ঘোষণা, যেখানে তিনি বলেন ছিলেন পশ্চিম তীরে ইসরায়েলকে সংযুক্ত করার কোনো পরিকল্পনা নেই। একই সময়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি রক্ষা করতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও ইসরায়েল সফর করেন।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে רבותের ধরনের প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে। তার দল লিকুদ পার্টি এই ভোটকে “বিরোধী দলের উসকানি” বলে আখ্যায়িত করে বলেছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষতি হতে পারে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “সালসলাভাবে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারটি শুধু আইন দেখানোর মধ্যে নয়, বরং কার্যকর পদক্ষেপে নিহিত”।

বিশেষ করে পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে, এটি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে চূড়ান্তভাবে শেষ করে দিতে পারে। এই বিষয়টি নিয়ে পর্যাপ্ত চাঞ্চল্য ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, কারণ আন্তর্জাতিক সমাজের বেশিরভাগ দেশ ও সংস্থা এই ধরনের উদ্যোগকে অবৈধ ও অবৈধ উদ্যোগ হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “আমরা নেসেটের এই ধরণের চেষ্টা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি। পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা হলো একত্রে ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিক ইউনিট, এবং ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌম অধিকার তাদের উপর নেই।” হামাসের পক্ষ থেকেও এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই বিলগুলো ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও উচ্ছেদ নীতির স্পষ্ট প্রকাশ, এবং পশ্চিম তীর দখলের এটি আইনত ও নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।” কাতার এই উদ্যোগকে “ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক অধিকারের লংঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের চ্যালেঞ্জ” হিসেবে অভিহিত করেছে।

এসব মন্তব্যের পাশাপাশি, সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “ইসরায়েলের দখলদারী কার্যক্রম কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে।” জর্ডানও এক বিবৃতিতে বলেছে, “এটি আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের স্বপ্রণোদিত অধিকার ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার বাধা।” বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে এক million এর বেশি ইসরায়েলি বসতি গড়ে উঠেছে, যারা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ। এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে কোনভাবেই শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।