ঢাকা | মঙ্গলবার | ১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতের হুসেনাবাদে নবাবদের বংশধররা আজও ব্রিটিশ পেনশন নিচ্ছেন

ভারতের হুসেনাবাদের নবাব পরিবারের বংশধররা আজও বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী পেনশন পান যা মূলত ব্রিটিশ আমলের উত্তরাধিকার। নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে, তারা এখনো এই পেনশন গ্রহণ করে থাকেন। এর মধ্যে অন্যতম হলেন ৯০ বছর বয়সি ফাইয়াজ আলী খান, যিনি তার ‘ওয়াসিকা’ বা রাজকীয় পেনশনের চেক পেতে পিকচার গ্যালারিতে আসেন। বয়সের ভারে তার হাত কাঁপলেও চোখে এখনও ঐতিহ্যের উজ্জ্বলতা দেখা যায়।

ফাইয়াজ আলী খান পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে এই পেনশন পান তাদের মধ্যে তিনি একজন, যারা আওয়াধ রাজবংশের উত্তরাধিকারসূত্রে এই বিশেষ পেনশন পেয়ে থাকেন। ‘ওয়াসিকা’ শব্দের অর্থ ফারসিতে ‘চুক্তি’ বা ‘অঙ্গীকার’। এটি মূলত অযোধ্যা রাজ্যের নবাবদের প্রজন্মের জন্য বরাদ্দ একটি ঐতিহ্যবাহী সুবিধা, যা ১৮৫৬ সালের আগে থেকে প্রচলিত। মূলত ব্রিটিশ শাসনামলে এই রীতির সূচনা হয়, যেখানে নবাব পরিবারের সদস্যরা তাঁদের ঐতিহ্য ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে এই পেনশনের সুবিধা পেতেন।

ভারতে এখনো রাজতন্ত্রের প্রভাব তো নেই, কিন্তু কিছু রাজ্যের নবাব পরিবারের এই ‘ওয়াসিকা’ পেনশন আজও চালু আছে। এই পেনশনের পরিমাণ খুবই সামান্য, মাসিক মাত্র ৯ টাকা ৭০ পয়সা। তবে প্রাপকদের কাছে এর অর্থের চেয়েও বড় গুরুত্ব রয়েছে, সেটি হলো ঐতিহাসিক সম্মান ও আধিক্য।

ফাইয়াজ আলী খান বলেন, ‘এটি এক পয়সাও হোক, আমরা এর জন্য কৃতজ্ঞ। এটি আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক।’ বর্তমানে প্রায় ১,২০০ জন ‘ওয়াসিকাদার’ এই পেনশন পান। পেনশনের পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়; বংশের সদস্যসংখ্যা বাড়লে তা ভাগ হয়ে কমে যায়।

এই অদ্যাপি প্রথার সূচনা হয় ১৮১৭ সালে, যেখানে অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার স্ত্রী বহু বেগম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে দুই কিস্তিতে ৪০ মিলিয়ন রুপির ঋণ দিয়েছিলেন। সেই ঋণের সুদ থেকে এই পেনশন চালু হয়, যা তখন মূলত আত্মীয় ও সহযোগীদের মাসিক সহায়তা হিসেবে বিবেচিত হত। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর এই ঋণের কিছু অংশ ব্যাংকে রাখা হয়, যেখানে বর্তমানে প্রায় ২৬ লক্ষ রুপির সুদ জমা রয়েছে। সেই সুদ থেকেই এই পেনশনের সরবরাহ হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আধুনিক সময়কে অনুসারে এই প্রথাটি এখন অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে, তবে যারা এর অধিকারী, তারা একে এক ঐতিহাসিক মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে দেখে থাকেন। আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে দেখা যায়, এক তোলা (১১.৭ গ্রাম) ওজনের রূপার মুদ্রায় মূলত এই ওয়াসিকা প্রদান করা হত, তবে নতুন ভারতীয় মুদ্রা চালুর পরে এর মূল্য অনেক কমে গেছে।

ফাইয়াজ আলী খান আর বলেন, ‘কত মানুষ ঘোড়ার গাড়ি বা টিমটমে চড়ে আসতেন, মহিলারা পর্দাঘেরা পালকিতে থাকতেন, সেই সময়কার প্রথাগুলো এখন আর প্রশস্ত নয়।’ এই ঐতিহ্যবাহী প্রথা আমাদের ইতিহাসের বড় অংশ, যা আজও আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব করে।

সূত্র: বিবিসি