ঢাকা | মঙ্গলবার | ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ওষুধ শিল্পে অগ্নিকাণ্ডের ফলে আড়াইশ কোটি টাকার ক্ষতি, অর্থনীতি ঝুঁকিতে

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের ওষুধ শিল্পে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে শীর্ষ ৪৫টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে বলে বাংলাদেশের অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি) নিশ্চিত করেছে।

অ্যান্টিবায়োটিক, ক্যানসার দমনকারী ওষুধ, ডায়াবেটিস ও ভ্যাকসিনসহ জীবনরক্ষাকারী নানা ঔষধের উৎপাদন এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে বলে জানানো হচ্ছে। বাপি বলছে, এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে দেশের ওষুধ শিল্পের উপর সমগ্র অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়তে পারে, যার মূল্যাতা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বোঝানো হয়, বেলা সাড়ে ১১টার সময় একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করেন বাপির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ১৮ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের ওষুধ শিল্পে ব্যবহার হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই অগ্নিকাণ্ড পুরো অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।

ডা. জাকির হোসেন জানান, দেশে বর্তমানে ৩০৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ২৫০টি সক্রিয়ভাবে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। বাপির প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শীর্ষ ৪৫টি কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে। অন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষতির পরিমাণ যোগ করলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে।

তিনি বলছেন, অগ্নিকাণ্ডে অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারজাত ওষুধ তৈরির উপকরণসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্পেয়ার পার্টস ও মেশিনারিজ পুড়ে গেছে। এই ক্ষতি পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করতে সময় লাগবে, কারণ এসব উপাদান আর আমদানি করতে হবে। এতে করে উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং রপ্তানি সূচীকেও প্রভাব পড়বে।

বাপির মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের ওষুধ শিল্প দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি মানসম্পন্ন ওষুধ ১৬০টির বেশি দেশে রপ্তানি হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশগুলো রয়েছে। ফলে এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে উৎপাদনচেইনে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

তিনি জানান, দেশের মূল কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে চীন, ভারত ও ইউরোপ থেকে। এই কাঁচামালের বড় অংশ জীবনরক্ষাকারী ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হয়, যা সাধারণত আকাশপথে আমদানি করা হয়। কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার ফলে এসব দামি কাঁচামাল ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদিকে, বিকল্পভাবে অন্য কোনও এয়ারপোর্টে পণ্য আনলেও তা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়, যা জটিলতা সৃষ্টি করছে।

আরো উদ্বেগের বিষয় হলো নারকোটিক্স বিভাগের অনুমোদনপ্রাপ্ত পণ্যগুলো। ডা. জাকির হোসেন বলেছেন, এই ধরণের পণ্য পুনরায় আনতে অনেক ধাপের ও সময়সাপেক্ষ অনুমোদন প্রয়োজন, ফলে এর পুনঃআয়নে বড় ধরণের জটিলতা তৈরি হয়েছে।

বাপির ধারণা, এই ক্ষতির প্রভাব একমাত্র কাঁচামালের ক্ষতি দিয়ে শেষ হবে না, বরং এর ফলাফল বিস্তৃত হবে উৎপাদিত শেষ পণ্যের ওপরও। তিনি বলেন, যদি কোনও একটি র-থেকামাল হারায়, তাহলে সেই উপাদানে নির্ভরশীল সব ধরনের প্রকোড্টের উৎপাদনই ঝুঁকির মুখে পড়ে। এই কারণে, তারা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

ডা. জাকির বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি জরুরি তদন্তের নির্দেশ, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিকল্প কার্গো ব্যবস্থাপনা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।