ঢাকা | রবিবার | ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রুনা লায়লার সংগীত জীবনের ৬ দশকঃ এক অভূতপূর্ব সংগীত যাত্রা

গানে গানে অগণিত শ্রোতার হৃদয় জয় করে জেগে উঠেছেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা। ১৯৬৪ সালের ২৪ জুন, মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি তার সংগীতের প্রথম pasos অংকিত করেন, যখন ‘জুগনু’ সিনেমায় ‘গুড়িয়া সি মুন্নি মেরি ভাইয়া কি পেয়ারি’ গানটি গাইতেন। সেই সময়ের কথা লিখেছিলেন তিসনা মেরুতি আর সুর করেছিলেন মানজুর। এর মাধ্যমে তাঁর অনন্য কণ্ঠ ও অসাধারণ গায়কীতে শ্রোতারা মুগ্ধ হন এবং এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর অবিরাম সংগীতযাত্রা, যা আজো অবিচ্ছেদ্যভাবে চলমান।

এই ছয় দশকের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে রুনা লায়লা ১৮ ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি। তার এই নির্ব Tanto influence ধারাবাহিকভাবে দেশের সংগীতজগতে তার স্থান করেছেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

রুনা লায়লা বলেন, ‘আমি খুব ভাগ্যবতী যে, শুরু থেকে আজও কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি এখনও গান গাইতে, সুর সৃষ্টি করতে পারছি – এটা মহান আশীর্বাদ। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সংগীতের সঙ্গে থাকাই আমার ইচ্ছা।’

মুক্তিযুদ্ধের আগেই তিনি বাংলা সিনেমায় প্লেব্যাক শুরু করেছিলেন। ১৯৭০ সালে, ‘স্বরলিপি’ সিনেমায় তার গাওয়া ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর আগে, পাকিস্তান রেডিওর ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে দেবু ভট্টাচার্যের সুরে দুটি বাংলা গান ‘নোটন নোটন পায়রাগুলো’ ও ‘আমি নদীর মতো পথ ঘুরে’ গেয়ে তিনি নজর কাড়েন।

পাকিস্তানের সিনেমা ও টেলিভিশনে নিয়মিত প্লেব্যাক করে দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করেন, তবে স্বাধীনতার পর দেশপ্রেমের টানে দ্বিধা না করে দেশেই ফিরে আসেন। তার সংগীত জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয় এখান থেকেই। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথম বাংলাদেশি শিল্পী হিসেবে বলিউডে পা রাখেন।

কল্যাণজি-আনন্দজির সুরে ‘এক সে বড়কর এক’ সিনেমার ‘ও মেরা বাবু চেল চাবিলা’ গানে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর ‘জান-এ বাহার’, ‘ইয়াদগার’, ‘অগ্নিপথ’, ‘স্বপ্ন কা মন্দির’সহ অসংখ্য সিনেমায় তার কণ্ঠের ঝর্ণা প্রবাহিত হয়েছে। এর বাইরে, দিল্লির এক সংগীত আয়োজনে তিনি আষ্টমিতে ৩০টি গানে কণ্ঠ দেন এবং গিনেস বুক অব রেকর্ডে নিজের নাম লেখান।

তার কণ্ঠের মাদকতা আজও প্রত্যেক মাধ্যমের নানাভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি সিনেমা, স্টেজ, টিভি ও নাটকের গানেও সমান সাফল্য অর্জন করেছেন। ৬০ বছর ধরে তার সুরেলা কণ্ঠশক্তি শ্রোতাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে চলেছে। তার প্রথম সিনেমা সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, আলমগীরের চলচ্চিত্র ‘একটি সিনেমার গল্প’-এ। সেই সিনেমায় কাজ করে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তার সুরে রেকর্ড হয়েছে একক ও যৌথভাবে ভারতের কিংবদন্তি আশা ভোঁসলের, হরিহরণের, পাকিস্তানের আদনান সামির, রাহাত ফতেহ আলি খানের সংগীত।

এত দীর্ঘ সময় ধরে সংগীতের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই বরেণ্য শিল্পীর ষাট বছর পূর্তিতে মাছরাঙা টিভির প্রিয় অনুষ্ঠান ‘স্টার নাইট’ একটি বিশেষ পর্ব আয়োজন করে। এই পর্বশুরুর দিনে ৬০টি গোলাপে তাঁকে粗ণের נעা, এক বছরের সময় কাটানো ৬০টি প্রশ্নের উত্তর, ও শ্রোতা এবং শিল্পীদের শুভেচ্ছায় সিন্ধু রচিত। দেশের জনপ্রিয় ১০ সংগীত তারকা এই আয়োজনে অংশ নেন, তাদের মধ্যে কনা, লিজা, লুইপা, কোনাল, ঝিলিক, সুকন্যা, সাব্বির, কিশোর, অপু ও ইউসুফ রয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের শিল্পীরাও পাঠিয়েছেন শুভেচ্ছা।

রুনা লায়লা বলেন, ‘দেশে ফিরে এই উৎসবে যোগ দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। ষাট বছরের সংগীত ভ্রমণের এই স্মরণীয় মুহূর্ত আমার জীবনের অন্যতম সুন্দর অভিজ্ঞতা।’ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন রুম্মান রশীদ খান, প্রযোজনা করেছেন অজয় পোদ্দার, সহকারে ছিলেন নিয়াজ মোরশেদ রাজীব এবং উপস্থাপনা করেছেন মৌসুমী মৌ।