ঢাকা | রবিবার | ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মন্দার মাঝেও বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ ৬১.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে

বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত এবং বিনিয়োগে ধীর গতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই সময়কালে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত নিট এফডিআই প্রবাহ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের বাজারে বিদেশি কোম্পানিগুলোর আস্থা আরও বাড়ছে, তারা ব্যবসা প্রসারে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, দেশে কার্যরত লাভজনক বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার একটি বড় অংশ পুনরায় বিনিয়োগ করছে। গত বছরের তুলনায় পুনঃবিনিয়োগের পরিমাণও বেড়েছে ৬১.৫ শতাংশ। অর্থাৎ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র মুনাফা স্থানান্তর না করেই, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের জন্য নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী নতুন মূলধনের (গ্রিনফিল্ড এফডিআই) প্রবাহ কমলেও, বাংলাদেশে এই খাতে ৩ শতাংশের রেকর্ড বৃদ্ধি দেখা গেছে। পাশাপাশি, বিদেশি মূল কোম্পানিগুলোর স্থানীয় ইউনিটগুলোতে অর্থায়ন বা ইন্টার-কোম্পানি ঋণের হার এক বছরে ২২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অর্থের এই প্রবাহ শুধু ছয় মাসের জন্য নয়, পুরো অর্থবছরেও আশাব্যঞ্জক। জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত নিট এফডিআই প্রবাহ গত বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়াও, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দেশের পাঁচটি বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা— বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), ও বিসিকের মাধ্যমে মোট প্রায় ৩৫৭৫ কোম্পানির নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি বিদেশি কোম্পানি থেকেও ৬৫ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮.৭ মিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০.৭ মিলিয়ন এবং ২০২৩ সালে ৯২৪.৪ মিলিয়ন ডলার। তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে ৬৭৬.৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। আর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে এই বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পেয়ে ১০০৯.৩ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের পরিবেশে বিদেশির আস্থা প্রমাণ করে। তারা আরও বলেন, যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি নীতিগুলো অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও বৃহৎ পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে।