প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত জাতীয় সনদ দেশের নতুন সূচনার পথের সূচনা করেছে। এটি বাংলাদেশের আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, পাশাপাশি গত ১৬ বছরের নৃশংসতা ও অস্থিরতার অবসান ঘটাবে। তিনি বলেন, “আজকের দিনটি আমাদের জন্য বিশেষ, কারণ এটিই আমাদের নতুন জন্মের দিন। এই স্বাক্ষরই আমাদের নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।” ১৭ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা—বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য দলের প্রতিনিধিরা এই সনদে স্বাক্ষর করেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও অন্যান্য সদস্যরাও এই ঐকমত্যের অংশ হন।
বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই ঐক্যমতের মাধ্যমে একটি যুগান্তকারী সৃষ্টির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। তিনি উল্লেখ করেন, এই সনদে স্বাক্ষর করে আমরা একে অন্যের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি—যা আমাদের নির্বাচনের মূল ভিত্তি। তিনি বলেন, যারা এই স্বাক্ষরে অংশ নিয়েছেন, তারা চাইলে আবার বসে—নির্বাচনকে সুন্দর ও সুষ্ঠু করার জন্য কীভাবে এগোতে হয়—তার পথ খুঁজে বের করতে পারেন। এই দিনটিকে তিনি জাতির জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন হিসেবে আখ্যা দেন এবং বলেন, এই ঐকমত্যে স্বাক্ষরকারীরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে দায়বদ্ধ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সনদ দেশকে বর্বর যুগ থেকে সভ্যতার পথে নিয়ে এসেছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই দিন আমাদের জন্য স্মরণীয়, কারণ এর মাধ্যমে আমরা একত্রিত হয়ে এক সঠিক লক্ষ্যে এগোতে পেরেছি। গত ঐকমত্য কমিশন গঠনকালীন ভয়ে ভয়ে শুরু হলেও, আজ সব রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়েছে—যা সত্যিই বিস্ময়কর। তিনি বলেন, এই সনদ আমাদের দেশের রাজনীতিতে নতুন দিশা দেখিয়েছে, যেখানে আইনে পরিচালিত সমাজ গড়ে তুলতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বঙ্গোপসাগর দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। যদি আমরা সঠিক পরিকল্পনা করি, গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি করি এবং সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাই, তবে আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অনেক বাড়বে। কক্সবাজার, মাতারবাড়ি ও মহেশখালীকে একযোগে উন্নত করায় সেগুলি বিশ্বের নিরঙ্কুশ সংগ্রাম কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এর ফলে বাংলাদেশ নেপাল, ভূটান, এবং সেভেন-সিস্টার্স দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক যোগাযোদ্ধার ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ এবং অন্যান্য সদস্যরা। তিনি বলেন, আমাদের সব স্রোত এক হলেও মূল ভূমিকাটি হলো একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এই স্বপ্নের প্রথম ধাপ হলো জুলাই জাতীয় সনদ। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশের নাগরিকরা এই অগ্রগতির সঙ্গে থাকবেন এবং রাজনৈতিক সকল পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতের কেন্দ্রীয় ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি ও অন্যরা এই ঐতিহাসিক দিনে অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনায় শহীদ পরিবার ও সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিগণও উপস্থিত ছিলেন—যেমন শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম।
অতিরিক্ত বলার জন্য জানানো হয়েছে, এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে অংশ নেন। বাসদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ কয়েকটি দল এই স্বাক্ষরে অংশ নেয়নি।
সংক্ষেপে, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন সূচনার দিন, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সমাজ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।