জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় নির্মিত সাতটি রেলস্টেশনের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা নানা ধরণের দুর্ভোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস মেইল ট্রেনও (৭৫-আপ, ৭৬-ডাউন), যা গরিবের ট্রেন হিসেবে পরিচিত, বহু দিন ধরে চলাচল বন্ধ। এর ফলে ময়মনসিংহ থেকে ভূঞাপুরের রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা সীমাহীন বিপাকে পড়েছেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষণ ও সরেজমিনে দেখা যায়, এসব স্টেশন এলাকাগুলো খালি এবং ভূতুড়ে পরিবেশে পরিণত হয়েছে। স্টেশনগুলোর প্রতিটি কক্ষ তালাবদ্ধ, বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই। সাধারণত প্রতিটি স্টেশনে একজন স্টেশন মাস্টার, সহকারী মাস্টার ও চারজন পয়েন্টম্যান থাকলেও বর্তমানে কেউই সেখানে নেই। ফলে, যাত্রীদের জন্য টিকেট কাটার ও সহায়তা দেওয়ার ধাপগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সরিষাবাড়ী উপজেলায় আন্তঃনগর ট্রেনগুলো—যেমন যমুনা, অগ্নিবিনা, ও জামালপুর এক্সপ্রেস—চালু থাকলেও, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেসসহ অন্য ট্রেনগুলো দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। কিছু ট্রেন সাময়িকভাবে যাত্রা বিরত থাকলেও বেশিরভাগ ট্রেনই কোনও_Stop_ দেয় না।
উপজেলায় মোট সাতটি রেলস্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ১৮৯৯ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে চালু হওয়া বাউসী, বয়ড়া ও নব নির্মিত শহীদ নগর বারইপটল স্টেশনগুলোজনবল সংকটের কারণে কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। এই স্টেশনগুলো এখন ধান মাড়াই, খড় শেকানোর স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে চুরি, জুয়া, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় এসব স্টেশনের মূল্যবান সরঞ্জাম—যেমন যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র—ক্ষয়ে যাচ্ছে। ফলে, স্থানীয়রা এর গন্তব্যে হতাশ ও ক্ষুব्ध।
অন্যদিকে, ২০১২ সালে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও টাঙ্গাইল রেলপথে চালু হওয়া ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০২৪ সালের ২৮ মে ইঞ্জিন সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে এই রুটের হাজারো যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এই ট্রেনটি দুপুর ১২:৪০ মিনিটে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে জামালপুর ও টাঙ্গাইলের হেমনগর, ভূঞাপুর ও ইব্রাহিমাবাদ স্টেশনে যাতায়াত করত। তবে এখন অন্য যানবাহনকে বেশ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
নিরাপদ ও কম খরচায় যাতায়াতের জন্য ট্রেনকে অন্যতম মাধ্যম মনে করেন যাত্রীরা। মঞ্জুরুল ইসলাম, রিপন মণ্ডল ও অন্য অনেকে মন্তব্য করেন, ‘ট্রেন আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক, সুলভ ও নিরাপদ। ট্রেন বন্ধ থাকায় অনেক কষ্টে আছি। ট্রেন চালুর দাবি জানাই যেন সাধারণ মানুষ আরও স্বস্তিতে চলাচল করতে পারে।’
শহীদ নগর বারইপটল স্টেশনের বাসিন্দা সুমন মিয়া ও শাওন আহমেদ বলেন, ‘নির্মাণের পর এই স্টেশনটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। স্টেশন মাস্টারসহ রেলকর্মীরা থাকতেন, বেচা-কেনা হতো। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত রেল ভবন, কোয়ার্টার, এবং মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্টের খাতায় পরিণত হয়েছে।’
বয়ড়া স্টেশনের ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকে এই স্টেশন ছিল জনপদে পরিচিত। এখন তার আর কোন সক্রিয়তা নেই, স্টেশনটি তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। আগের মত লোক আসেনা, ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে (ঢাকা) বিভাগের অতি. মহাপরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম জানান, জনবল সংকটের কারণে অনেক স্টেশনই বন্ধ হয়েছে। ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজও চলমান, যার জন্য ধলেশ্বরী মেইল ট্রেনটি বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সম্ভবত এই ট্রেনটি পুনরায় চালু করা হবে।