ঢাকা | মঙ্গলবার | ১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

অ্যাটর্নি জেনারেলর কাছ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করার আহ্বান

অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও কার্যকর এবং স্বাধীন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আইনের বিভিন্ন ধারা এবং উপধারাগুলিতে কিছু অস্বচ্ছতা ও অস্পষ্টতা রয়েছে, যা ভবিষ্যতে কার্যকারিতা কমিয়ে আনতে পারে এবং প্রশাসনিক সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য জরুরি যে, এই কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও নিরেপেক্ষ করে গড়ে তোলা হয়।

শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ বিষয়ক এক পরামর্শসভায় তিনি এসব কথা বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরে বলেন, এটি এখনো একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু এই সংস্থার বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা বা কার্যক্রম নেওয়ার জন্য কার্যকর mechanisms বা আইনি বিধান এখনো তৈরি হয়নি, যা পরিবর্তন দরকার।

মানবাধিকার কমিশনের আইন খসড়ার ধারা-৫ নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, যেখানে বলা হয়েছে, কমিশনের সদস্যদের কমপক্ষে একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এবং কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ সদস্য নারী হতে হবে। তিনি মনে করেন, আধুনিক যুগে নারীর অবস্থান অনগ্রসর বা অধীনস্ত হিসেবে দেখানো ঠিক নয়। তিনি এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন এবং বলেন, সদস্য নির্বাচনের জন্য সর্বসম্মত মতামত বা কনসেন্স থাকা উচিত। কারণ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত কোটায় নারীদের বা নৃগোষ্ঠী সদস্যদের বাধ্যতামূলক রাখলে এটি উপগোষ্ঠী হিসেবে বোঝা হতে পারে।

আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ধারা-৬ অনুযায়ী, কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ ও পদত্যাগের নিয়মগুলো স্পষ্ট, কিন্তু উচ্চপদস্থ এই পদে আবেদন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এমনকি, স্বাধীনচেতা, নীতিবান ব্যক্তি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন কি না, সেটাও বিবেচনাধীন। তদ্ব্যতীত, উপধারা (৫) অনুযায়ী, কমিশনের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের প্রক্রিয়াও স্পষ্ট নয়, যা আরও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

ধারা ১৩ অনুসারে, কমিশনের কার্যাবলি সম্পর্কিত গবেষণা ও সুপারিশ এর কথা থাকলেও, প্রোঅ্যাকটিভ মামলা দায়েরের ক্ষমতা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। ফলে, এই সব আইনি অস্বচ্ছতা দূর না হলে, মানবাধিকার কমিশনের কার্যকরিতা সীমিত হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

ধারা-১৬ ও ১৯(১) নিয়ে তিনি জানান, ধারা ১৬ অনুযায়ী, এক বা একাধিক ব্যক্তিকে মধ্যস্থ সমঝোতার জন্য নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় যদি আলাদা মিডিয়েটর নিয়োগ বা তাদের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেওয়া হয়, তাহলে কমিশনের ক্ষমতা এবং মিডিয়েটরের ক্ষমতার মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও, ক্ষতিপূরণ বা জরিমানা দেওয়ার দায়িত্ব কে নেবে, তা স্পষ্ট নয়।

ধারা ১৯(১) এর ‘গ’ অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য দিতে তলব করার ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। তবে, যদি কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে পালিয়ে যায়, তখন কি তাকে ডেকে দায়মুক্ত করা হবে, সেটাও স্পষ্ট নয়। এইসব আইনি অস্বচ্ছতা দূর না করা হলে, মানবাধিকার কমিশনের কার্যকারিতা সীমিত হয়ে পড়বে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।