ঢাকা | মঙ্গলবার | ১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

হাসিনা ও তার স্বজনদের বিচার দেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার: জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা

আন্তর্জাতিক মর্যাদাপূর্ণ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অব্যাহত তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি গত বুধবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার স্টাবের সঙ্গে বৈঠক করার সময় এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক ইউনূস মনে করেন, দেশের ভাবমূর্তি ও আইন অনুসারে এই বিচার চলমান থাকছে, তবে তিনি একথাও জানান, বিএনপি নেত্রী হাসিনা কয়েকটি উসকানিমূলক ও অস্থিতিশীল মন্তব্য করছেন যা দেশ আসলে সহ্য করবে না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রত্যর্পণ করা হচ্ছে।

বৈঠকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন, জাতিসংঘ সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আঞ্চলিক সহযোগিতা, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার ও জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতিসংঘে বৈঠককালে, ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি জানান, গত ১৪ মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে বিপুল সংখ্যক আন্তর্জাতিক সমর্থন এসেছে।

অতীতে অনেক সময় ধরে চলা রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সাধনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, জানিয়েছেন ইউনূস। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে সম্ভবত অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাজনৈতিক সংস্কারে দেশ বড় ধরনের অগ্রগতি করেছে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন। তিনি আরও জানান, অদূর ভবিষ্যতে দলীয় ঐক্য ও সংলাপের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কার কার্যকর হবে।

আন্তর্জাতিক আলোচনা চলাকালে, ইউনূস আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সার্কের কার্যক্রম ঢিমে পর্যায়ে চলে এসেছে। এই সংকট কাটিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে। পাকিস্তানে সম্প্রতি ভয়ঙ্কর বন্যায় এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন, এবং জলবায়ু পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে তুলে ধরেন।

তিনি জানান, বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি চলছে, যাতে নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। তিনি ১১টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন যা দেশের রাজনৈতিক রূপান্তরে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি, তিনি বললেন যে বিভাগীয় সংলাপ ও সংশ্লিষ্ট চুক্তিগুলো সেপ্টেম্বরে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতীয় প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে চলমান পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে, ইউনূস বলেন, গঠনতন্ত্র ও রাজনৈতিক সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দলগুলো জুলাইতে আলোচনা চালাতে হবে। তিনি পাকিস্তানে সমঝোতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শরীফের আমন্ত্রণও গ্রহণ করেন।

অন্তর্বর্তী ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে, ইউনূস ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেন, বিশেষ করে ইতালির সঙ্গে ব্যবসা ও লজিস্টিক সংযোগ আরও শক্তিশালী করতে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বাস্তবায়নে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে আরও বৃদ্ধি হবে।

তাদের বৈঠকে বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অভিবাসন সমস্যা, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং প্রধানমন্ত্রী মেলোনির সম্ভাব্য সফর নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। মেলোনি বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে, যাতে করে অভিবাসীদের নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়। তিনি সাক্ষর করেন যে, ভূমধ্যসাগরে মানবপাচার বন্ধ করাই এখন জরুরি দাবি।

অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে মানবপাচার বিরোধী কঠোর নীতিমালা গ্রহণ করেছে এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ইউনূস জানান, এই বিষয়ে আরও বৈশ্বিক সমন্বয় প্রয়োজন।

একই সাথে, তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর এখন তুঙ্গে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পথেই এগোচ্ছে। এর ফলে তিনি ভবিষ্যতে আবারও তার আগের ভূমিকায় ফিরে যেতে চান। মেলোনি ইউনূসের কাজের জন্য প্রশংসা করে আশ্বস্ত করেন যে, ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সফল ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব রকম সহায়তা দেবে।

আরও আলোচনা হয় রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে, যেখানে ইউনূস বাংলাদেশের কাছে অনুরোধ করেন, অধিক অর্থায়ন ও সমর্থন নিয়ে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে। মেলোনি ভবিষ্যতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানোর অঙ্গীকার করেন, যা রোহিঙ্গা বিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশ নিবে।