ঢাকা | বুধবার | ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহের নির্দেশ

ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনি বন্দিদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট। গত রোববার এক ঐতিহাসিক রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই নির্দেশ দেয়। আদালত তার রায়ে বলেন, বন্দিদের জন্য উন্নত মানের খাদ্যসহ নিয়মিত পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাদের মৌলিক জীবনযাত্রার অধিকার নিশ্চিত হয়। এই নির্দেশনা প্রথম বার নয় যখন ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রায় ২৩ মাসে এত বড় রায় দেওয়া হলো।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ভয়াবহ অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর ফলস্বরূপ, তারা ফিলিস্তিনিদের ব্যাপকভাবে আটক করছে। গ্রেপ্তারকৃত অনেককে মাসের পর মাস শিবির ও কারাগারে রেখেও অভিযোগ ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আটক বন্দিদের ভিড়, অপ্রতুল খাবার, চিকিৎসার অভাবসহ রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।

আদালত তিন সদস্যের বেঞ্চের সর্বসম্মত রায়ে জানান, সরকারের দায়িত্ব রয়েছে প্রতিদিন তিনবেলা পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহের। তাদের মতে, এই নির্দেশনা বন্দিদের মৌলিক অধিকারের অংশ। তারা আরও স্বীকার করেছেন, বাস্তবতাটা বাস্তবতার চেয়ে খারাপ, ফলে খাদ্যসংকোচনের কারণে অপুষ্টি ও অনাহার সৃষ্টি হচ্ছে।

রায়ে বলা হয়, এখানে আরাম বা বিলাসিতা দেখার কিছু নেই। বরং আইনের আওতায় নির্ধারিত ন্যূনতম বেঁচে থাকার শর্ত পূরণই লক্ষ্য। এতে আরও বলা হয়, কোন দেশের জন্যই অন্যের জীবনযাত্রার মানের পরিপন্থী হয়ে অসদুপায় অবলম্বন করা উচিত নয়।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের দাবি, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ৬১ জন বন্দি ইসরায়েলের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে, চলতি বছরের মার্চে এক কিশোর (১৭) অনাহারে মারা গেছেন বলে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেছেন।

কারাগার তদারকির দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির কড়া অবস্থান রয়েছে। তিনি বলেন, বন্দিদের নিরাপত্তা ও জীবন মানকে শুধুমাত্র আইনের নির্ধারিত সর্বনিম্ন স্তরের মধ্যেই রাখতে হবে। এ বিষয়টি তাকে ‘অপ্রিয় মনে হলেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগ উঠেছে, এই রায়ের কারণে মানুষদের অধিকার হরণের ব্যাপারে ইসরায়েল অনেকটাই নির্লিপ্ত। মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর সিভিল রাইটস ইন ইসরায়েল (এসিআরআই) ও গিশার এই রায়কে বড় জয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এএসিআরআই সামাজিক মাধ্যমে লিখেছে, ‘ইসরায়েলি কারাগারগুলোকে সরকার দর্শনীয় উপাসনালয় বা রক্তাক্ত শিবিরে রূপান্তর করেছে। সব দেশের জন্যই মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। অপরাধ বা অন্যায় থাকলেও, কারাগারে বন্দিদের অনাহারে রাখার মানসিকতা অবশ্যই সবার জন্য অগ্রহণযোগ্য।’

সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, এপি