ঢাকা | বুধবার | ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয় চাল আসছে। গত ২১ আগস্ট থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে মোট ৭১টি ট্রাকে ২ হাজার ৪৮৫ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বাজারে চালের আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে, এই আমদানি স্বাভাবিক থাকলেও বাজারে চালের দামে কোনও পরিবর্তন হয়নি, বরং আগের মতোই দাম বজায় রয়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে ইরি ও বোরো মৌসুম শেষ হলেও দেশের ধান চাষে ইতিবাচক সাফল্য পাওয়া গেছে। তারপরও হঠাৎ করে বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পায়। তাই বাজারের স্বাভাবিকতা ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর এবং দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য চাল আমদানি করার। গত ১২ আগস্ট আমদানিকারকদের জন্য বরাদ্দ ইস্যু করে অনুমতি দেওয়া হয়, এরপর থেকেই ভারত থেকে চাল আমদানি চলমান। এবারের আমদানিতে প্রধানত বেনাপোল বন্দরে উপস্থিত চাল আমদানিকারক সংস্থাগুলি—উষা ট্রেডিং, মৌসুমী ট্রেডার্স, হাজী মুছা করিম ও সন্স, গনী এন্টারপ্রাইজ, এবং প্রিয়ম এন্টারপ্রাইজ—অংশ নিচ্ছেন।

প্রখ্যাত চাল আমদানিকারক গনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ বলেন, তার কোম্পানির নামে চালের আমদানি চলছে এবং ভারত থেকে চাল আসার ফলে পাইকারী ও খুচরা বাজারে দাম কিছুটা কমে গেছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, আমদানি চলমান থাকলে দাম আরও কমবে।

আরেক আমদানিকারক শামীম আহমেদ জানান, বন্দরে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন জাতের চালের মধ্যে স্বর্ণা, সম্পা কাটারি, রত্নাসহ মিনিকেট চাল রয়েছে। দেখানো দাম হল, সম্পা কাটারির কেজি ৭০-৭১ টাকা, স্বর্ণা জাতের চালের কেজি ৫২-৫৩ টাকা এবং অন্য জাতের চালের দাম প্রায় ৫৫-৫৬ টাকা। তবে এই ব্যবসা থেকে ব্যবসায়ীরা খুব বেশি লাভ করতে পারছেন না, কারণ ভারত থেকে চাল আমদানির আগেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন, ফলে দাম চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

বেনাপোলের খুচরা বিক্রেতা হাজি স্টোরের হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে চালের দাম ভোক্তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে। পিয়াসে, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সম্পা কাটারির দাম ৭২ টাকা থেকে কমে ৭১ টাকায় এসেছে। অন্যান্য চালের দামও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, আগে থেকে কিছুটা দাম কমে গেছে। তারা দিনমজুর, দরিদ্র বা সাধারণ মানুষের জন্য এটি সুখবর। মনে হচ্ছে, ভারত থেকে চাল আসার ফলে দাম কিছুটা কমেছে। দুই মাস আগের ইরি-বোরো মৌসুমের চাল এখন বাজারে থাকলেও ব্যবসায়ীরা আগের মতো মজুদ থাকায় দাম বাড়াতে চাইছে না।

বেনাপোল C&F এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, চার মাসের বিরতির পর আবার চাল আমদানির সূচনা হয়েছে, যা বন্দরেও কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এর ফলে চালের দাম আরও কমবে।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে এই বন্দর দিয়ে ৭১ ট্রাকে ২ হাজার ৪৮৫ টন চাল আমদানি হয়েছে। প্রতিদিনের বিস্তারিত ট্রাক ও টনের তথ্য উল্লেখ করে তিনি জানান, ২১ আগস্ট ৯ ট্রাকে ৩১৫ টন, ২৪ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ টন, ২৭ আগস্ট ১২ ট্রাকে ৪২০ টন, ২৮ আগস্ট ৩ ট্রাকে ১০৫ টন, ৩০ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ টন, ৩১ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ টন, ১ সেপ্টেম্বর ১২ ট্রাকে ৪২০ টন, ২ সেপ্টেম্বর ১৪ ট্রাকে ৪৯০ টন এবং ৩ সেপ্টেম্বর ৩ ট্রাকে ১০৫ টন চাল আমদানি হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে ৬ ট্রাকে আরও ২১০ টন চাল আমদানি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, আমদানিকৃত চাল দ্রুত ছাড়করণের জন্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছর ১৫ এপ্রিল এই বন্দরে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়েছিল।