ছক্কা মারার অভিনব কৌশলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বর্তমানে অন্যতম সামনের সারিতে রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে খেলাধুলার পরিসংখ্যান ও পর্যবেক্ষণ দেখাচ্ছে যে, বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যায় ছক্কা হাঁকাচ্ছেন, যা অচিন্ত্যনীয় মনে হতে পারে। সত্যিই কি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে এত বড় ছক্কা মারার রেকর্ড গড়ে ফেলেছে? একদমই তাই।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছর বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২২ ম্যাচে মোট ১০৯টি ছক্কা হাঁকিয়েছে। এর পাশাপাশি, টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০ ম্যাচে ১৩০টি ছক্কা এবং পাকিস্তান ২৫ ম্যাচে ১৩০টি ছক্কা মারতে পেরেছে। অর্থাৎ, বাংলাদেশ দল দ্রুতগতির এই ব্যাটিং দিক দিয়ে এখন বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
তবে শুধু দলীয় পারফরম্যান্স নয়, ব্যাটসম্যানরাও ব্যক্তিগতভাবে বড় ছক্কা মারার রেকর্ড গড়ছেন। গত বছর ২৪ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ১২২টি ছক্কা মারেছিলেন, যা দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক মৌসুমে একশোর বেশি ছক্কার নজির স্পর্শ করেছিল। তবে, এ বছর এটি স্পষ্ট যে রেকর্ড ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বাস্তব থেকে দূরে নয়। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ম্যাচে মোট ১৪টি ম্যাচে বাংলাদেশ ১০৯টি ছক্কা হাঁকিয়েছে।
বিশেষ করে, গত দুই বছরে দলটির দুজন খেলোয়াড়ের মধ্যে একটির জন্য অন্যের সঙ্গে ছক্কা মারার প্রতিযোগিতা যেন আরও জমে উঠেছে। এর মধ্যে জাকের আলির সংগ্রহ ছিল ২০২৪ সালে ১৭ ইনিংস খেলে ২১টি ছক্কার রেকর্ড। তবে, কালকের ম্যাচে পারভেজ হোসেন সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন, এক ইনিংসে একটি ছক্কা হাঁকিয়ে। এরপর, তানজিদে পাশে থেকে শুরু করে আরও উত্তেজনা তৈরি করেন।
অন্যদিকে, তানজিদ নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে রেখেছেন, জানতে চান কীভাবে আরও বেশি ছক্কা মারার পরিকল্পনা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাটিং করি উইকেটের পরিস্থিতি বুঝে। উইকেট কেমন আচরণ করে, কিভাবে খেলতে হয়, এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করি। আমাদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের থাকতে হয় স্পষ্ট ধারণা দিয়ে খেলার।’ এই দুই ব্যাটসম্যানের জুটি এখন বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে এক ভরসার নাম। তারা যুব পর্যায়ে একসঙ্গে খেলেছেন, আর এখন দেশের অন্যতম মূল ভিত্তিতে জুড়ে দাঁড়িয়েছেন।
তানজিদ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আলোচনা হয় কীভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, কোন বলগুলো লক্ষ্য করে মারতে হবে। এর ফলে আমাদের পরিকল্পনা ও সমন্বয় আরও সুদৃঢ় হয়।’
টিমের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে মনোযোগ দেওয়া। এর চিত্র দেখা যায় বোর্ডের রেকর্ডে, খেলোয়াড়দের ভাষা ও মনোভাবেও স্পষ্ট। প্রশ্ন উঠে, এই সংস্করণে কি বাংলাদেশের ‘ইন্টেন্ট’ বা মনোভাব বদলে গেছে? উত্তরে তানজিদ বলেন, ‘আমাদের পুরো দলই এখন সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাচ্ছে খেলা নিয়ে। প্রত্যেকেই নিজের অবদান রাখতে পারে এবং কেমনভাবে মাঠে খেলবে, সেটা সবাই একটু পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে।’
তাই, এই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট সংস্কৃতিকে আরও প্রাধান্য দেওয়ার জন্য কোচ জুলিয়ান উডকে যোগ করা হয়েছে। ২৮ দিনের চুক্তি শেষে তিনি ৩ সেপ্টেম্বর দলের বাইরে চলে যাবেন। ব্যাটসম্যানরা কি শিখলেন এবং কেমনভাবে কাজ করছেন, সে বিষয়েও বিস্তর উৎসাহ ও আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে, তানজিদের মতো খেলোয়াড়দের জন্য এই নতুন কৌশল কার্যকারিতা আরও বাড়াতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।