সিলেটের ভোলাগঞ্জ এলাকায় সাদা পাথর লুট ও আর্থিক দুর্নীতির ঘটনায় প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে। মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, অভিযানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্তের ধারাবাহিকতায় অপরাধের ধরন এবং সংশ্লিষ্টতার মাত্রা অনুযায়ী আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার, দুদকের একটি সভায় এই অনুসন্ধানের প্রস্তাব ওঠার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে, সিলেটের দুর্নীতি দমন বিভাগ পরিচালিত অভিযানে ৪২ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংস্থার নাম উঠে এসেছিল। শিগগিরই একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে, ১৩ আগস্ট, দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সা’দাৎ’র নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর লুটের ঘটনা সরেজমিনে পরিদর্শন করে। তারা দেখেছে, পর্যটন সেবার অবকাঠামো ও নদীর তীরের বিজিবি ক্যাম্পের উপস্থিতিতেও অনেক কাঁচামালের ছাড়পত্রহীন এবং অবৈধ পাথর উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, হজি কামাল, কোম্পানীগঞ্জের সাবেক শ্রমিক দলের সভাপতি লাল মিয়া, যুবদলের বিভিন্ন নেতাসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়াও, এই তালিকায় বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতার নাম রয়েছে, যেমন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া, শাহাবুদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, এবং অন্যরা।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে জামায়াতের দুই নেতা মো. ফকরুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীন, পাশাপাশি এনসিপির দুই নেতা নাজিম উদ্দিন ও আবু সাদেক। এর বাইরে, আরও ১১ জনের নাম পাওয়া গেছে, যারা এই লুটের সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আনর আলী, উসমান খাঁ, ইকবাল হোসেন আরিফ, দেলোয়ার হোসেন জীবন, আরজান মিয়া, জাকির, আলী আকবর, আলী আব্বাস, জুয়েল, আলমগীর আলম ও মুকাররিম আহমেদ।
অন্যদিকে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিভাগের বিভিন্ন প্রধানের বিরুদ্ধে সহকর্মী কর্মকর্তাদের অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরদ, কোম্পানীগঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও থানার অফিসার ইনচার্জ উজায়ের আল-মাহমুদ আদনান সহ অন্যান্য ব্যক্তির নাম রয়েছে। এ ছাড়া, ব্যারাডার গার্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।