ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ স্থাপনের দাবি ঢাকা চেম্বারের

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য একান্ত প্রয়োজন স্মারক বিচারকদের নিয়োগের মাধ্যমে একটি ‘কমার্শিয়াল কোর্ট’ প্রতিষ্ঠা করা এবং আইনি প্রক্রিয়াগুলোর সংস্কার। তিনি উল্লেখ করেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতা থেকে বিদেশি বিনিয়োগে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি, বিনিয়োগ ও মেধাস্বত্ত্ব বিরোধের সংখ্যাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব পরিস্থিতির মোকাবেলায় একটি আলাদা কমার্শিয়াল কোর্ট স্থাপন ও আইনি প্রক্রিয়ার সংস্কার জরুরি হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ব্যবসায় বিরোধ নিষ্পত্তি ও চুক্তি প্রয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। এই অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবহুল এই দেশে আদালতে মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যার কারণে বিচারিক কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রিতা আরও প্রবলভাবে অনুভব হচ্ছে। ফলে স্থানীয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তিনি জানান, ২০০১ সালে আরবিট্রেশন আইন চালু হলেও, তা সম্পূর্ণভাবে বাণিজ্যিক পরিবেশে কার্যকর হয়নি। বাণিজ্য বিষয়ক বিরোধসমূহ প্রথাগত আদালতের বাইরে সমাধান করা গেলে, আদালতের চাপ কমবে এবং ব্যবসায়িক পরিবেশে উন্নতি হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী এক মাসের মধ্যে কমার্শিয়াল কোর্টের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। বিচারকদের জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইইউ নিবিড়ভাবে কাজ করছে, যা দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে সহায়ক হবে। মো. আবদুর রহিম খান জানান, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতা শুধু এফডিআই আর্কষণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না, তা রপ্তানি সম্প্রসারণ ও বৈশ্বিক বাণিজ্যেও নির্দিষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার, তিনি বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসায়িক চুক্তির প্রয়োগ এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি সোনালী দা রত্নে, বিয়াকের প্রধান নির্বাহী কে এ এম মাজেদুর রহমান, সিঙ্গাপুরের রাজাহ অ্যান্ড থান-এর কো-হেড ভিকনা রাজা, বিচারপতি তারেক মোয়াজ্জেম হোসেন ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় অনেকাংশে অপর্যাপ্ত, যদি তা গুরুত্ব দিয়ে উন্নত না হয়, তাহলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ ধীরে ধীরে কমে যাবে। আদালতের পরিবর্তে আরবিট্রেশন কেন্দ্রের মাধ্যমে বিরোধ সমাধানেই বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অনুষ্ঠানে সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট খাতের স্টেকহোল্ডাররাও উপস্থিত ছিলেন।