বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের পলায়নের পর বিএনপিকেও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা শূন্য করতে দেশে ও বিদেশে থাকা কিছু মহলের প্ররোচনায় নতুন একটি ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ কার্যকর করা হয়েছে।
তিনি এক সাক্ষাৎকারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, খাগড়াছড়ির সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে কেন্দ্র করে কিছু শক্তি দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এসব অস্ত্রের মাধ্যমে দেশকে বিভক্ত ও দুর্বল করার চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে।
আব্বাস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কিছু রাজনৈতিক দল অজুহাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ভিন্ন পথে নিতে চায় এবং এ কাজে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকারীদের হাতের ছুড়ি হিসেবে কাজ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালকের ঘোষণা, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন নতুন এক ‘মাইনাস-টু ফর্মুলা’ চালু হয়েছে, যা ২০০৬ সালে ১/১১ এর সময়ের মতোই। তখন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে এই ফর্মুলা চালু হয়েছিল। এখন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা আলাদা রূপে একই লক্ষ্য বাস্তবায়নে চেষ্টা করছে।
আব্বাস অভিযোগ করেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণা ও রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বিএনপিকে দুর্বল বা অবিশ্বাস্য হিসেবে উপস্থাপন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তিনি মনে করেন, এখনও কিছু আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা ও আদর্শিক দলের গোষ্ঠী বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য সক্রিয় রয়েছে। তাদের লক্ষ্য, দেশের ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে বিএনপিকে সরিয়ে দেওয়া।
তিনি বলেন, ‘যেসব চক্র বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তারা এর পেছনে রয়েছে। তারা দেশি-বিদেশি নানা ছদ্মবেশে শয়তানের মতো আসছে। এই সমস্ত ষড়যন্ত্রকারীরা মূলত দেশের বর্তমান সরকারকে দুর্বল করতে চাইছে।’
আব্বাস জানান, বেশ কিছু আওয়ামী লীগ সমর্থক ও আমলারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে, কারণ তারা মনে করছে, বিএনপিকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিলে তাদের স্বার্থ হাসিল হবে। তিনি মন্তব্য করেন, কিছু রাজনৈতিক দলও এই মানসিকতা অনুসরণ করছে এবং ভিন্ন পথে এগোচ্ছে। বিএনপির এই নেতা সতর্ক করে বলেন, অন্যদিকে বিভিন্ন ইসলামী দলসহ অনেকে নানা ইস্যু তৈরি করে নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে একটি দল দাবি করছে, তাদের দাবিগুলো মানা না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না, যা সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদী আচরণ হিসেবে তিনি আখ্যা দেন।
আব্বাস প্রকাশ করেন, তিনি গভীরভাবে দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো গভীর উদ্বেগে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছি, নিজের মাটির জন্য লড়াই করেছি। অন্যের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ দেওয়ার মানসিকতা এই দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যায় না।’ তিনি মনে করেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নতুন ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলার পাশাপাশি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সাজেক ও নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালের বিষয়গুলো বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনাও একই সূত্রে গাঁথা, অন্য কিছু নয়।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হবে। জনগণের ব্যাপক সমর্থন থাকায় কিছু মহল দলটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে। মিথ্যা প্রচারে তার জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে পারবেন না।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রশাসনের নেতাদের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের কাউকে সরিয়ে দিতে হবে, অন্যথায় নির্বাচন সঠিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে না। তিনি জানান, বিএনপি সাংগঠনিক প্রস্তুতিতে রয়েছে এবং ফেব্রুয়ারিতেই ভোটের জন্য প্রস্তুত।
নির্বাচন নিয়ে সম্ভাব্য জোট ও সমঝোতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর নেওয়া হবে। তবে তিনি মনে করেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বানচালের চেস্টা করছে, যা সফল হলে দেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় হবে।
অর্থাৎ, তিনি অপ্রত্যাশিত মন্তব্যে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। অধ্যাপক ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে ভোটের দিন ঠিক রয়েছে।’
খালেদা জিয়া নির্বাচন করবেন কি না, এ প্রশ্নে আব্বাস বলেন, এটা তার শারীরিক অবস্থা ও ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। এখনো এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি যোগ করেন, ‘খালেদা জিয়া নিজেও এ ব্যাপারে কিছু বলেননি।’
খালেদা জিয়া যদি ক্ষমতায় ফেরেন, তবে তার ভূমিকা কী হবে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সময়ই এই প্রশ্নের উত্তর দেবে।
অবশেষে, ইসলামি দলের জোট গঠন ও তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও চ্যালেঞ্জের কথা বলেন, তিনি বলেন, বিএনপি এ বিষয়ে চিন্তিত নয়। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জনগণ মূলত উদারপন্থি মুসলমান, যারা সাম্প্রদায়িকতা নয়, বরং গণতান্ত্রিক ও মধ্যপন্থি দলকেই পছন্দ করে।