ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

রাতারাতি বৈষম্যের সমাধান সম্ভব নয়: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৈষম্য দূর করা সহজ নয় এবং তা এক রাতের মধ্যেই সমাধান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বিশ্বাস করেন, রাষ্ট্রের এই কাঠামো পরিবর্তনের জন্য গভীর থেকে সংস্কার জরুরি।

বিশেষ করে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা যে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার নিয়ে আলোচনা করছি, তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। এমনকি নির্বাচন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েও এখনো সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, যেসব বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও লড়াই চলছে, সেগুলোর সমাধান মুহূর্তের মধ্যে হবে—এমনটা ভাবা ঠিক নয়।

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবের একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটুকু সু-রক্ষিত’ শিরোনামের এই সেমিনারটি আয়োজন করে অর্পণ আলোক সংঘ।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। অনুষ্ঠানটির পরিচালনা করেন অর্পণ আলোক সংঘের চেয়ারম্যান বীথিকা বিনতে হোসাইন।

মির্জা ফখরুল বলেন, অদ্যাবধি রাষ্ট্রের কাঠামো এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের অন্যায়, অবিচার, নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের অবসান না ঘটিয়ে একটি সুন্দর রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখার পরিবর্তে, একবারে সেটি সম্ভব নয়।

তিনি জানান, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই ৫২ বছরের মধ্যে নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে পারিনি; এখন হঠাৎ করে সবকিছু ঠিক হবে—এমন ধারণা করা ভুল। তিনি বলেন, রাজনীতি করে যাচ্ছে, কিন্তু এটা এক রাত বা অল্প সময়ে সম্ভব নয়। এর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, লক্ষ্য ও আন্তরিকতা দরকার।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, এই কাঠামো বদলানো না গেলে বৈষম্য কমবে না। তিনি উল্লেখ করেন, কাজের অপ্রতুলতা, বার্থের দুর্ব্যবহার এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নানা সমস্যা থেকে শুরু করে, বিভিন্ন স্তরের অন্যায়ের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক সংস্কার। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এর জন্য লড়াই করছে, কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে।

বিপ্লবের আশার কথা শোনাতে তিনি বলেন, ‘এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এই কাঠামো পরিবর্তন করতে পারলে বৈষম্যহীন সমাজের কাছাকাছি যেতে পারবো।’ তিনি আরও মন্তব্য করেন, বর্তমান সিস্টেমে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় শীর্ষ পর্যায়ের আমলাদের দ্বারা, যার ফলে সাধারণ শিক্ষকদের মতো মানুষকেও ঢাকায় আসতে হয় নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য—যদিও এর দরকার নেই।

তিনি বলেন, ‘দেখুন, যদি ঢাকায় না আসেন, তবে ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ কেন হবে? স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সব নিয়োগের সঙ্গে যোগসাজশ ও দুর্নীতির চলমান চিত্র স্পষ্ট। এ কারণেই রাতারাতি এই সংস্কার ঘটানো সম্ভব নয়।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি মেহনতি মানুষের আন্দোলনের দাবি-দাওয়ার সাথে নিজেকে যুক্ত করে তোলার। ২০১৫ সালে গণসংহতি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করি। আমাদের লক্ষ্য হলো দেশের জনগণের স্বার্থে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।’

তিনি আরও বলূন, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জনগণের ঐক্য রক্ষা; তার জন্য আমাদের সবাইকে এককাট্টা থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অন্য ধরনের পার্থক্য থাকলেও মূল সমস্যা হলো, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান। গত ৫৪ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা সত্যিকারের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বরং লুটপাটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।’

ববি হাজ্জাজ মন্তব্য করেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের সময় ব্যাংকগুলো ব্যাপক লুটপাটের শিকার হয়েছে। যদিও এখন কিছু ব্যাংকের অপারেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তবে দুর্নীতির ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে লুটপাট বন্ধ হওয়ার বদলে, সেই লুট চলাকালীন সময়ের পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতা ছিল না। এ ব্যাপারে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।’