বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৈষম্যের অবসান কোনো overnight প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি একটি ধীরপথের সংগ্রাম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই কাঠামো পরিবর্তন একদিনে সম্ভব নয়, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের পক্ষে আসল পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি ও তার নির্মাণে পরিবর্তন আনতেই হবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়েও একই কথা প্রযোজ্য। যদিও জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরও সচেতন হচ্ছে, তবুও যে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও লড়াই গেছে, তা মুহূর্তের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে—এই চিন্তা করা ভুল। এতে সময় লাগবে এবং অবশ্যই পরিকল্পনা ও ধৈর্য্য নিয়ে কাজ করতে হবে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর প্রেসক্লাবে একটি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানের শিরোনাম ছিল ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটুকু সু-রক্ষিত’ এবং এটি সংগঠন অর্পণ আলোক সংঘের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। সভার সঞ্চালক ছিলেন অর্পণ আলোক সংঘের চেয়ারম্যান বীথিকা বিনতে হোসেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যখন রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের কথা বলছি, তখন অর্থনৈতিক অবকাঠামোও পরিবর্তনের প্রয়োজন এই দুর্বার বিশ্বাস ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সময়ের দূর্নীতি, বৈষম্য, নৈরাজ্য ও স্বৈরাচার গ্রাসের মধ্যে আমাদের দেশ এখনো স্থিতিশীল নয়। একদিনের মধ্যে এসবের অবসান সম্ভব নয়।
তিনি ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে নতুন চেতনার সৃষ্টি হয়েছে বলে আশ্বাস দেন। তবে ইতিহাসে অভিজ্ঞতা দেখায়, ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়মিত ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। তাই আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, জোড়াতালি ও কৌশল নয়, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সময় রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার অপরিহার্য। তিনি বলেন, যেখানে আমাদের সামনে বৈষম্য দূর করার চেষ্টা চলছে, সেখানে যদি পরিবর্তন আনা হয়, তাহলে হয়তো আমরা বৈষম্যহীন সমাজের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব। এর জন্য সোচ্চার ধারনা ও কার্যকর উদ্যোগের দরকার।
তিনি আরও বলেন, দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা মূলত কোনঠাসা— সেখানে সবকিছু নির্ভর করে কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তের উপর। একজন স্কুলশিক্ষকও যদি নিজের সমস্যা সমাধানে ঢাকায় আসতে বাধ্য হন, যেখানে অসঙ্গতিপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে যদি সুবিধা পাওয়া যায়, তবে সমস্যার সমাধান সহজ হবে। কিন্তু সিস্টেমের দুর্বলতায়, সবাইকে ঘুষ ও দুর্নীতির সাথে লড়াই করতে হয়। তবে এই অবকাঠামোর পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা মেহনতি মানুষের আন্দোলনের শক্তিকে সংগঠিত করতে চাই। ২০১৫ সালে গণসংহতি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মাধ্যমে দেশের শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামে অংশগ্রহণ রক্ষা করছি।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। আমাদের মূল লক্ষ্যও এই বিষয়টি।’ তিনি গর্বের সঙ্গে বললেন, ‘বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে নানা পার্থক্য রয়েছে, যেমন ধনসম্পদের পার্থক্য। ৫৪ বছরের ইতিহাসে ক্ষমতাসীন দলগুলো নেতিবাচক নীতি প্রণয়ন করে, যা সাধারণ মানুষের জন্য নিপীড়ন ও বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।’
ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময় ব্যাংক লুটের ঘটনা চলেছে। সম্প্রতি বেশ কিছু নন-ব্যাংকি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে, যা বড় ধরনের পদক্ষেপ। তবে তার পরেও ব্যাংক লুটের ঘটনা বন্ধ হয়নি। ব্যাংকিং খাতে লুটপাট এখনো অব্যাহত রয়েছে, যা আমাদের প্রকৃত অবক্ষয়কে নির্দেশ করে। এর জন্য নিয়মিত নজরদারি থাকা জরুরি, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এ ব্যবস্থাগুলো যথাযথভাবে কাজ করছে না।’}