ঢাকা | বুধবার | ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

দেশজুড়ে হেফাজতের পোস্টারঃ ব্লগার মুনাওয়ারা মুবাশিরিনের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি

গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নামে লাগানো পোস্টার দেখা গেছে। এসকল পোস্টারে জনৈক ব্লগার মুনাওয়ারা মুবাশিরিনের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি এবং প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছে। এই ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, সিলেট, নোয়াখালী, মাদারীপুর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই ধরনের পোস্টার চোখে পড়েছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। জনবহুল এলাকা, রাস্তার মোড়, বাজার, মসজিদ-মাদ্রাসার দেয়াল, কোথাও বাদ নেই, সর্বত্রই চোখে পড়ছে এই বিতর্কিত পোস্টার।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকার জনবহুল জায়গাগুলোর দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো রয়েছে হেফাজতে ইসলামের পোস্টার। পোস্টারগুলোতে বেশ বড় হরফে লেখা রয়েছে, ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর।’ এর নিচেই লেখা, ‘সমকামী, ব্যভিচারকারী, আল্লাহর আইন অমান্যকারী, আল্লাহর গজবপ্রাপ্ত, ইসলামের শত্রু মুনাওয়ারা মুবাশিরিনের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দাও, দিতে হবে।’ পোস্টারের নিচে লেখা রয়েছে, ‘প্রচারেঃ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।’ সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, পোস্টারগুলোতে মুনাওয়ারা মুবাশিরিন নামের এক ব্লগারের ছবিও জুড়ে দেয়া হয়েছে, যা স্পষ্টতই ভীতি প্রদর্শন ও হুমকির সামিল।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক পোস্টারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা এই পোস্টার সম্পর্কে খবর পেয়েছি। কারা এসব পোস্টার লাগিয়েছে, তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুনাওয়ারা মুবাশিরিন একজন নারীবাদী ব্লগার ও সমকামী অধিকার কর্মী। তিনি তার ব্যক্তিগত ব্লগ ছাড়াও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নারী অধিকার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সমকামীদের অধিকার, মানবাধিকার ও সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। স্পষ্টভাষী ও প্রথাবিরোধী লেখার জন্য তিনি অনেকের কাছে বিতর্কিতও বটে।

এই পোস্টারিংয়ের ঘটনা দেশের মুক্তচিন্তা ও বাক স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছেন অনেকে। প্রকাশ্যে একজন নাগরিকের ফাঁসির দাবি জানানো এবং তার ছবিসহ পোস্টার লাগানো অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ঘটনায় জনমনে ভীতি সঞ্চার হয়েছে। কে বা কারা, কি উদ্দেশ্যে এই পোস্টারিং করেছে তা দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।