বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রায় প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ জোগাতে অনেকের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ। প্রতিদিনের সংসারের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। সুতরাং, জনজীবনের নিত্যদুর্ভোগ কিংবা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি শুধু সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করেন, তাহলে জনগণের কাছে সংস্কার আগে না সংসার—এ প্রশ্নটিই মুখ্য হয়ে উঠতে পারে।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, দুর্ভোগ মেনে নিলেও জনগণ এখনো সরকারের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না। কারণ, জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরা নিজেদেরকে সফল দেখতে চায় কিনা, কার্যক্রমের মাধ্যমে সেটি তাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার জনগণের সামনে তাদের আগামীদিনের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করলে এটি একদিকে জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতাকেই নিশ্চিত করবে অপরদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রমেও গতিশীলতা বাড়বে।
তারেক রহমান বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকল অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে দেশ। সেই যাত্রায় আপনাদের বিশ্বস্ত সঙ্গী দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ। সুতরাং, আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন।
তারেক রহমান বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্রে ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। তবে তাবেদার অপশক্তি বারবার স্বাধীন বাংলাদেশকে বিপথে নেওয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছিলো। বিশেষ করে পলাতক স্বৈরাচার গত দেড় দশকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বিজয়ের গৌরব ও অর্জনকে প্রায় বিকিয়ে দিয়েছিলো। তবে ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট তাবেদার মাফিয়া চক্রের প্রধানের পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭১ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের; আর ২০২৪ হচ্ছে দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতার রক্ষার।
তারেক রহমান বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—আগামীর বাংলাদেশে প্রতিটি স্বাধীনতা এবং বিজয় দিবস হয়ে উঠবে জনগণের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায় কিংবা প্রতিশ্রুতি পূরণের একটি অর্থবহ দিন।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট প্রয়োগের অধিকার বহাল এবং কার্যকর থাকা না থাকার সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সুসংহত থাকা না থাকার একটি গভীর সংযোগ কিংবা সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের নাগরিকদেরকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতাহীন করে দেওয়া গেলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এমনকি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাও দুর্বল এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র এবং জনগণকে স্বনির্ভর এবং শক্তিশালী করতে হলে রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের বিকাশ এবং চর্চা জরুরি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জাতীয় সংসদ। জবাবদিহিমূলক সরকার ও সংসদ যথাযথভাবে কার্যকর থাকলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নও নিশ্চিত থাকে। আমাদের মনে রাখা দরকার, জনগণ শক্তিশালী না থাকলে জাতীয় ঐক্যও শক্তিশালী হয়না।
তারেক রহমান বলেন, একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর কম সময় নয়। লাখো মানুষের রক্তের উপর দিয়ে দেশের জনগণ আজ এক অভুতপুর্ব ঐক্যের মোহনায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই ঐক্যকে কাজে লাগিয়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। একটি বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ইতোমধ্যেই ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্যই হচ্ছে, শিশু-নারী-বৃদ্ধ অর্থাৎ দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রকে অবশ্যই প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে হবে।