ঢাকা | সোমবার | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

গুম-খুনের অভিযোগে ক্ষমা চেয়ে আয়নাঘরের কথা স্বীকার করলেন র‍্যাব ডিজি

পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, র‍্যাবের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আছে গুম ও খুনের। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ সেসব বিষয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। পাশাপাশি তিনি স্বীকার করেছেন র‍্যাবে আয়নাঘর ছিল, আছে।

যদিও তিনি গত ৭ অক্টোবর দাবি করেছিলেন, র‍্যাবে আয়নাঘর বলে কিছু নেই।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান র‌্যাব ডিজি।

র‍্যাবের গোপন বন্দিশালা বা আয়নাঘরের বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, র‍্যাবে আয়নাঘর ছিল, আছে। সেটা সেভাবেই রাখা হয়েছে। গুম, খুন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে আয়নাঘরসহ যা যে অবস্থায় আছে সেভাবেই রাখার জন্য। আমরা কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন করিনি। যা যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থায় রাখা হয়েছে।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, র‌্যাব সৃষ্টির পর থেকে যারা র‌্যাব সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত, অত্যাচারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের কাছে এবং নারায়ণগঞ্জের সাত খুনসহ যারা র‌্যাবের দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের কাছে আমরা দুঃখপ্রকাশ করছি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আমি যত দিন দায়িত্ব পালন করব এবং আমার এই কর্মকর্তারা যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কখনো কারও নির্দেশে গুম, খুনের মতো ফৌজদারি অপরাধে জড়িত হবে না। র‌্যাব সদস্যদের দ্বারা নির্যাতন ও অত্যাচারের মতো ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন বিচার হয়, সেটা আমরা প্রত্যাশা করি।

বিচারের মাধ্যমে দায়মুক্তি চেয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ধরনের অপরাধ আমলে নিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে র‌্যাবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আছে, সেগুলোর বিচার হবে বলে জানান তিনি। এভাবেই র‌্যাবের দায়মুক্তি সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সম্প্রতি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল (বিএনপি) র‍্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে দাবি তুলেছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে নেওয়া হবে। সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আমরা থাকলাম।

বর্তমানে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়েছে, তবে প্রত্যাশিত জায়গায় এখনও পৌঁছায়নি উল্লেখ করে র‍্যাব ডিজি বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র‍্যাব তার দায়িত্ব আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে।

র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পরে র‍্যাবের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে। এ কাজ করতে গিয়ে র‍্যাবের ১৬ জন সদস্য বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে র‍্যাবের ৫৮ জন কর্মকর্তা ও ৪ হাজার ২৪৬ সদস্যকে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। আনসার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিদ্রোহ, গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিতিশীলতা, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে র‍্যাব।

র‍্যাবের পোশাক পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, র‍্যাবের পোশাক পরিবর্তনের ব্যাপারে দাবি উঠেছে। আমরা চিন্তা ভাবনা করছি। আর র‍্যাবের নিজস্ব কোনো আইন নাই। পুলিশ আইনে র‍্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। র‍্যাবের জন্য আমরা আলাদা একটি আইন করার চিন্তা ভাবনা করছি। এছাড়া আর কোন কোন বিষয় সংস্কার করা যায় সেজন্য গণমাধ্যম ও জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, মামলাটি হাইকোর্টের আদেশে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই কমিটিতে র‌্যাবের প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে র‌্যাবের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।