ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি) প্ল্যাটফর্মে রেনাটা পিএলসি কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেফারেন্স শেয়ারের আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয়েছে। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় প্রথমবারের মতো এই প্রেফারেন্স শেয়ারের লেনদেন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং রেনাটা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ এস কায়সার কবির। অনুষ্ঠানের এক অংশ হিসেবে ডিএসইর ট্রেনিং একাডেমি, নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও রেনাটা পিএলসির মধ্যে তালিকাভুক্তিকরণ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস, এবং রেনাটা পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবির নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেনাটা পিএলসির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মোস্তফা আলিম আওলাদ, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. জুবায়ের আলম এবং ইস্যু ম্যানেজার সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেল হক। ওটিসি মার্কেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ও সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফয়সাল আবদুল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, রেনাটা পিএলসির প্রেফারেন্স শেয়ার তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ডিএসইতে একটি নতুন প্রোডাক্টে লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রথমবারের মতো প্রেফারেন্স শেয়ারকে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ হিসেবে ডিএসইর অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত করা হয়, যা দেশের পুঁজিবাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, এই প্রেফারেন্স শেয়ারে ইক্যুইটি ও ডেট উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার ফলে এটি একটি হাইব্রিড ইনস্ট্রুমেন্ট। এনেছে এই প্ল্যাটফর্ম চালুর ফলে এই ধরনের বিকল্প আর্থিক উপকরণের তালিকাভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা পুঁজি উত্তোলনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। রেনাটার এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে অন্যান্য কোম্পানিকেও প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুতে উৎসাহিত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সৈয়দ এস কায়সার কবির বলেন, প্রেফারেন্স শেয়ারের ইস্যু একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ প্রক্রিয়া। বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রেনাটা পরিকল্পিত বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই বিকল্প হিসেবে প্রেফারেন্স শেয়ার জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি আরও যোগ করেন, এই শেয়ারে ভোটাধিকার না থাকায় মালিকানায় বড় ধরনের ডাইলিউশন না হওয়ায় মূলধন জোগান সহজ হয়েছে। প্রেফারেন্স শেয়ারের লভ্যাংশ হার ট্রেজারি বন্ডের রেফারেন্স রেটের ভিত্তিতে নির্ধারিত, এবং এর বার্ষিক রিটার্ন প্রায় ১৫ শতাংশ, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ আকর্ষণীয়। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে রেনাটার আর্থিক অবস্থা আরও সুদৃঢ় হবে। ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক নির্ভরতার পরিবর্তে পুঁজিবাজার ভিত্তিক অর্থায়ন দ্রুত গড়ে তুলতে হবে। রেনাটা পিএলসির এই প্রেফারেন্স শেয়ারের ইস্যু ও তালিকাভুক্তি একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত, যা অন্যান্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুরূপ উদ্যোগ গ্রহণে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করবে। তিনি ভবিষ্যতে রেগুলেশন সংস্কার, প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এই ধরনের তালিকাভুক্তি আরও দ্রুত ও কার্যকরী করে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। ডিএসই চেয়ারম্যান আরও বলেন, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দ্রুত তালিকাভুক্তির সুবিধা ও বিশেষায়িত বিনিয়োগ কাঠামো রয়েছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত করতে ডিএসই নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। উল্লেখ্য, রেনাটা পিএলসি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে নন-কাউমুলেটিভ, নন-পার্টিসিপেটিভ ও সম্পূর্ণ রূপে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরযোগ্য প্রেফারেন্স শেয়ারে মোট ৩২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। প্রতি শেয়ারের মূল্য ধরা হয়েছে ১,৯০০ টাকা। তার মেয়াদ নির্ধারিত হয়েছে ২০২৫ সালের ১৯ বা অক্টোবর পর্যন্ত, এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তৃতীয় বছর থেকে ধাপে ধাপে এই প্রেফারেন্স শেয়ারগুলো সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। বর্তমানে ডিএসই এটিবি প্ল্যাটফর্মে রেনাটা পিএলসির এই প্রেফারেন্স শেয়ারসহ মোট দুটি ইক্যুইটি এবং সাতটি বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে।














