শীত approaching লালমনিরহাটের কৃষিপ্রধান সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা এবং পাটগ্রাম উপজেলাগুলি জমজমাট হয়ে উঠছে। এই সময়ে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শীতকালীন সবজি সফলভাবে চাষ ও পরিচর্যায়। অধিকাংশ এলাকায় বিশেষ করে ফুলকপি ও বাঁধাকপির ফলন ভালো হলেও বাজারে সেই লাভের পরিমাণ এখনও কৃষকদের কাঙ্ক্ষিত নয়।
আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর এলাকায় প্রতিদিন ট্রাকভর্তি ফুলকপি রংপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠে কৃষকেরা একজন ফুলকপি ১২ থেকে ১৪ টাকায় কিনছেন, যেটির ওজন সাধারণত ১ থেকে আড়াই কেজি। অর্থাৎ কেজিপ্রতি দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৫ থেকে ৬ টাকা। পরিবহন খরচ ও অঞ্চলের ভিন্নতার কারণে এই দাম পরিবর্তিত হয়।
অপরদিকে, জেলার খুচরা বাজারে দেখা যাচ্ছে অন্যরকম পরিস্থিতি। শহরের গোশালা বাজার, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের হাড়িভাঙ্গা, বড়বাড়ী, মহেন্দ্রনগর ও বুড়ির বাজারে খুচরা বিক্রেতারা ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় এবং পাতাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করছেন। ফলে কৃষকের কাছ থেকে বাজারে আসার দামে বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে।
বাজারের এই পার্থক্য নিয়ে কৃষকদের পাশাপাশি ভোক্তারাও অভিযোগে মুখর। বড়বাড়ী কাঁচামাল আড়তের ব্যবসায়ী মজিদুল মিয়া বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহের সময় দাম একরকম থাকলেও, আড়াতে আসার পরে তা বেড়ে যায়।
সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাব থাকায় অনেক কৃষক কম দামে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কাকিনা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, দ্রুত নষ্ট হওয়ার ভয় থেকে তারা লোকসান দিলেও সবজি বিক্রি করছেন। অন্যদিকে, বড়বাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী মো. আব্দুল কাদের বলেন, ফলন ভালো হলেও দাম কম থাকায় কৃষকেরা উৎপাদন খরচ চালাতে পারছেন না।
শহরের বাজারে দাম কম ও বিক্রির ব্যবধানের কারণে ভোক্তারাও ক্ষুব্ধ। আফজাল আলী ও নুরুল ইসলাম বাসসে বলেন, এই জেলা একটি সবজি উৎপাদনকারী এলাকা। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি সরবরাহ হয়। এই সময়ে সাধারণত ১০-২০ টাকায় বেশিরভাগ সবজি পাওয়া যায়। দাম এমন হলে বড় শহরগুলোর পরিস্থিতিরও ভাবা যায় সহজে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়, এই মৌসুমে জেলায় আলু বাদে প্রায় ৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। ধীরে ধীরে এই আবাদ বাড়বে। পাশাপাশি, বিষমুক্ত ও নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাজারের দামের ফারাক কমাতে সরকারি নজরদারি জোরদার করতে হবে, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং কৃষক সমবায়ের মাধ্যমে সরাসরি বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া, সংরক্ষণাগার ও পরিবহন অবকাঠামো উন্নত করলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবেন, ভোক্তারাও উপকৃত হবেন।














