ঢাকা | সোমবার | ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ঐক্যের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর

দলমত নির্বিশেষে দেশের অখন্ডতা, বিদেশি আগ্রাসন ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

হাসনাত বলেন, বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে নীতিগত মতপার্থক্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দেশের অখন্ডতা, বিদেশি আগ্রাসন, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস চলবে না। সামনের পথ অতিক্রমের জন্য আমাদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে।

বুধবার বিকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট আয়োজিত ‘বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই ঐক্যের কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সভাপতি সুবর্ণ আসসাইফের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন জবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান তানভীর।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিস্টদের আর কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না। এবার যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে বাংলাদেশ আর কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, এই জাতি যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন জুলাই অভ্যুত্থানের কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই বিজয় যেন চিরঞ্জীব থাকে, সেই দোয়া আল্লাহ তায়ালার কাছে করছি। শহিদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত জবি শিক্ষার্থী শহিদ একরামুল হক সাজিদদের বোন ফারজানা হক বলেন, আমার মা এখনও সাজিদের কাপড় বুকে নিয়ে ঘুমায়। আমি আমার ভাই হারিয়েছি, আমার মতো অনেকে তাদের পরিবারের মানুষকে হারিয়েছে। যাদের হারিয়ে এই স্বাধীনতা সেটা যেন বৃথা না যায়। তার জন্য সবাইকে একতা ধরে রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের ভুলে যাবেন না। বিশ্বজিৎকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। জগন্নাথ যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলাদেশে বিশ্বজিৎ, সাজিদকে মনে রাখবে। তাদের জন্য আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, ছাত্রদের নিয়ে কাজ করতে হবে।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, আপনারা আদর্শের বক্তব্য রাখেন- কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াতে অপপ্রচার চালাবেন না। তাহলে আপনারা ছাত্রলীগের মতো হবেন। আপনাদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ছাত্রদলের দ্বারা সামান্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রদল অনেক বিসর্জন দিয়েছে।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররাজনীতির এজেন্ডা হওয়া উচিত ছাত্রদের নিয়ে কাজ করা। যারা করবে না তাদের ছাত্ররা গ্রহণ করবে না। ছাত্রলীগের মতো কেউ আচরণ করলে তাদের মতো পরিণতি হবে। আমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। আমাদের বর্তমান বড় সংকট হলো শিক্ষা। শিক্ষার যদি সংস্কার না হয়, তাহলে বারবার দিল্লির দাসত্ব করতে হবে। এদেশের জনগণ এবার দিল্লি আধিপত্য রুখে দাঁড়িয়েছে, আগামীতেও করবে। এজন্য দিল্লির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দূর করতে হবে।

তিনি বলেন, ছাত্রদের সঙ্কট কিভাবে সমাধান হবে, যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হয়। এজন্য ছাত্র নির্বাচন করতে হবে। এখন সময় এসেছে ছাত্র রাজনীতির সংস্কার করা। তাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন। ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সহাবস্থান প্রয়োজন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ করে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আপনারা কাজ করেন। আমরা সঙ্গে আছি। দরকার হলে আপনাদের জন্য আমরা আবার জীবন দেব। আবার রক্ত দেব। এখন আমাদের ঐক্যের দিকে এগোতে হবে। কাউকে পেছনে ফেলে রাখবেন না।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ভারতীয় মিডিয়া নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছে, তার নিন্দা জানাই। আমরা ভারতের দাসত্ব করার জন্য লড়াই করি নাই। আমরা ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবিকতার জন্য লড়াই করেছি। মওলানা ভাসানীর ‘দিল্লি না ঢাকা’ স্লোগান আমরা দিচ্ছি। তার আদর্শের ভিত্তিতে আমরা ঐক্যে আসতে পারি।

জবি ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে গত ১৫ বছরে ছাত্রদল মাঠে ময়দানে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। এ সময় তিনি আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতন হওয়া সব নেতাকর্মীদের স্মরণ করেন।

জবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইকবাল হোসেন শিকদার বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অনৈতিকতার দিকে চলে যাচ্ছে। জগন্নাথসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা নৈতিকতার উন্নতির জন্য কোর্স চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুল হাসান তানভীর বলেন, প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে এতক্ষণ ধৈর্য ধরে বক্তব্য শোনার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এই ঐক্য যেন অটুট থাকে, আমাদের সবাইকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

এর আগে বিকাল সাড়ে তিনটায় কুরআন তিলাওয়াত, গীতা পাঠ ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।