ঢাকা | সোমবার | ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

গাজায় ৫৭ হাজারের বেশি পরিবার নারীদের দ্বারা পরিচালিত: জাতিসংঘ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বর্তমানে ৫৭ হাজারের বেশি পরিবার নারী-led। এই সব পরিবার বেশিরভাগই জনাকীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় বসবাস করছে, যেখানে ক্ষুধা ও রোগের সঙ্গে চলমান সংগ্রামের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজা একেবারেই অবহেলিত হয়ে পড়েছে, অনেক পরিবার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। হাজার হাজার পুরুষ প্রাণ হারিয়েছেন বা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। শুক্রবার জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)-এর প্রতিনিধি নেস্টর ওওমুহাঙ্গি এক সংবাদ সম্মেলনে গাজা শহরের হাসপাতাল, নারীদের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্র, যুব কেন্দ্রীক কার্যক্রম এবং বিতাড়িত জনগণের শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি জানান, ‘গাজার ৫৭ হাজারের বেশি পরিবার এখন নারীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। তাদের অনেকেরই সন্তানদের ধার দেওয়ার জন্য কোনও উপার্জন নেই, তারা গভীর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।’ এছাড়াও তিনি আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শীতের বৃষ্টিপাত ও বন্যা মোকাবেলায় নতুন চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন, যা পরিস্থিতির আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। পরিবারগুলোকে খাবার এবং পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নেস্টর ওওমুহাঙ্গি বলছেন, ‘এখন মানুষ আর সাময়িক নিরাপত্তা, শিক্ষা বা স্বাভাবিক জীবন চাইছে না। তারা কেবল একটি তাঁবু, ছোট হিটার বা আলো চায়। তাদের প্রত্যাশা ভেঙে পড়েছে—যেমন ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলো।’ স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি জানান, গাজার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র অর্ধেক ক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। কর্মীসংখ্যা কম, চাপ অনেক বেশি এবং মৌলিক জিনিসের ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে, গাজা সীমান্তের রাফা ক্রসিংকেও ব্যাপক আলোচনা চলছে। ইসরায়েলি পরিকল্পনায় শুধুমাত্র বহির্গমন পথ হিসেবে সীমান্তটি খোলার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও ৮টি মুসলিম দেশ কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভুখণ্ডে ফিরে যাওয়ার অধিকার হারাবে এবং মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ হবে, যা আল জাজিরা জানিয়েছে। এই সকল দেশ মিসর, কাতার, জর্ডান, জাকার্তা, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের যৌথ বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে, ইসরায়েলি এই উদ্যোগ ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের চেষ্টার অংশ এবং ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানান। এই পরিকল্পনায় দাবি করা হয়েছে, রাফা সীমান্ত দুদিকেই খোলা থাকবে এবং একটি টেকনোক্র্যাটিক ফিলিস্তিনি সরকার গঠন করা হবে, যার তদারকি করবে একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী। শনিবার দোহায় অনুষ্ঠিত গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় কাতার প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল_THani বলেন, দুই মাসের যুদ্ধবিরতি এখন ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এটি পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিরদানও বলেন, আন্তর্জাতিক বাহিনী গাজায় পাঠানোর আলোচনা চলছে, যাদের মূল কাজ হবে সীমান্তে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি পক্ষের বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা। অন্যদিকে, শনিবার সকালে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর গাজায় একটি পরিবারের খামার দেখার সময় ড্রোন হামলার শিকার হন তারা। এই পরিস্থিতিতে, রোবেন আইল্যান্ডের প্রবেশদ্বারে খোদাই করা আছে বিশ্বখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উক্তি, ‘কারাগারের ভেতর না গেলে কোনো জাতিকে সত্যিকারভাবে জানা যায় না। জাতি নিজের সেরা নাগরিকদের মতো আচরণ করে না; বরং তার নিচের স্তরের মানুষদের প্রতি তার আচার-আচরণই মূলত চিরসত্য।’ এই উক্তি যেন এক প্রকার অনুভবের ভাষা হয়ে উঠেছে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য, যেখানে দুই বছর আগে গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণে নিখোঁজ হওয়া ৩৪৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহও এখন হাঁটু ইউনিসের হাসপাতালে ফিরে এসেছে। যদিও প্রায় ৯৯টি মরদেহ সুপরিমারভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, অধিকাংশই বিকৃত। মিডল ইস্ট আই-এর সাংবাদিক মাহা হুসাইনি যুদ্ধের সব সময় গাজা থেকে প্রতিবেদন দিচ্ছেন, তিনি বলেন, পরিবার ও ফরেনসিক চিকিৎসকরা গাজার শোকাশ্রিত পরিবেশে মরদেহ শনাক্তের জন্য সংগ্রাম করছেন, কারণ তাদের কাছে মৃতের মৃত্যুর কারণ বা পরিচয় শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। এই অবস্থার মাঝে, গাজার পরিস্থিতি জটিল ও দু:খজনক, যেখানে যুদ্ধ আর সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।